বৌদ্ধযুগের পাত্রের মধ্যে খোদ বুদ্ধের দেহাংশ! রয়েছে এই কলকাতাতেই

কলকাতার ভারতীয় মিউজিয়ামে অসংখ্য প্রাচীন বস্তুর মধ্যে রাখা আছে কিছু পাত্র। বৌদ্ধযুগের পাত্র, গায়ে খোদাই করা ব্রাহ্মী লিপি। আপাত দৃষ্টিতে অন্যান্য বৌদ্ধবিহারের থেকে প্রাপ্ত বস্তুর থেকে খুব একটা আলাদা নয়। কিন্তু এর পিছনে রয়েছে একটা গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস। বলা ভাল, বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস। একটা সময় এই পাত্রগুলির ভেতরেই রাখা ছিল গৌতম বুদ্ধের দেহাংশ!

গোটা বিশ্বে শান্তির বাণী শুনিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধ। মৃত্যুর পর তাঁর দেহাংশ কোথায়, এই নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ছিল বিতর্ক, অনুসন্ধান। সেই সময়ই উঠে আসে একটি চমকপ্রদ আবিষ্কার। সালটা ১৮৯৮। ডব্লিউ সি পেপ নামের এক ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার হাজির হন পিপরাহওয়া গ্রামে। ভারত-নেপাল সীমান্তের এই গ্রামে একটি জায়গায় খোদাই করতে গিয়ে মাটির নীচ থেকে খুঁজে পান পাঁচটি ছোট পাত্র। পাত্রের ভেতর সোনাদানা, মুল্যবান পাথর তো রয়েইছে, তার পাশাপাশি রয়েছে কিছু হাড়ের টুকরো। মানুষের হাড়।

সন্দেহ বাড়ে। তবে একটু খুঁটিয়ে দেখতেই তাজ্জব বনে যান ঐতিহাসিকরা। পাত্রের গায়ে খোদাই করা লিপির পাঠোদ্ধার করে তাঁরা জানতে পারেন, এই দেহাংশগুলো স্বয়ং গৌতম বুদ্ধের! শুধু তাই নয়, পরবর্তীকালে ওই অঞ্চলে আরও কিছু পাত্র পাওয়া যায়। সেখান থেকেও পাওয়া যায় বুদ্ধের দেহাংশ!

বুদ্ধের ইতিহাস খুঁটিয়ে দেখলে জানা যাবে, মৃত্যুর পর তাঁর দেহাংশ আটটি পরিবারের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়। যার মধ্যে ছিল বুদ্ধের পিতৃবংশ শাক্যরাও। ঐতিহাসিকরা মনে করেছিলেন, সেই শাক্যদেরই প্রাপ্ত দেহাংশেরই খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে উঠে আসে আরও একটি নতুন তথ্য।

বৌদ্ধ ধর্মের সঙ্গে যাঁদের নাম জড়িত, তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকবে সম্রাট অশোকের নাম। ঐতিহাসিকদের গবেষণা বলছে, গৌতম বুদ্ধের দেহাংশ যেসব জায়গায় পোঁতা হয়েছিল, অশোক সেইসব জায়গা থেকে নিয়ে আসেন সেসব। তারপর নিজের বানানো বৌদ্ধস্তূপগুলির ভেতর সেগুলোকে সংরক্ষণ করেন। ঐতিহাসিকরা মনে করছেন, পিপরাহওয়া গ্রামে বুদ্ধের দেহাংশ অশোকই রেখেছিলেন।

সেই দেহাংশ রাখা আছে দিল্লির ন্যাশনাল মিউজিয়ামে। তবে পাত্রগুলির দর্শন পেতে গেলে একবার ঢুঁ মারতেই হবে কলকাতার মিউজিয়ামে।

Powered by Froala Editor

Latest News See More