একচ্ছত্র অফিস পাড়া। যতদূর চোখ যায়, ব্যস্ততা ছড়িয়ে আছে প্রতিটি মানুষের পায়ে। তারই মাঝে প্রায় ৮২ বছরের এক পুরোনো পানশালা। বলতে গেলে ধূসর কেজো ভিড়ের মধ্যিখানে জেগে আছে এই সনাতন ব্রডওয়ে হোটেল।
আরও পড়ুন
মাঙ্কি বার, শান্ত সন্ধ্যা ও ঠান্ডা পানীয়ের ঠেক
২৭এ, গণেশচন্দ্র এভিনিউ। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের ৬নং গেটের ঠিক উল্টো ফুটে ঝিম ধরা সন্ধের মতো বসে থাকা এই পানশালা আপনাকে নিয়ে যাবে খানিকটা অতীতেই। পুরোনো ভারী দরজা ঠেলে ঢুকলেই নাকে আসবে অদ্ভুত এক পুরোনো কলকাতার গন্ধ, যা নিজেই নিজের ভিতরে বুঁদ। কাঠের চেয়ার-টেবিল, ফিকে হয়ে আসা টেবিল ক্লথ, মৃদু কিন্তু স্বচ্ছ হলুদ আলোর এক গুঞ্জন। না, এখানে কোনো সুর বাজে না কোথাও, নির্বাক ব্যর্থ প্রেমিকের মতো টিভি চালানো থাকে উঁচুতে। আদতে যে কলকাতা পুরোনো, পুরোনো মুখেদের ভিড়ে নিজেকে খুঁজে নিতে মরিয়া সে কলকাতার উল্লাস ব্রডওয়ে হোটেল।
এই অঞ্চলটিকে মূলত শহরের প্রাণকেন্দ্র বলা যেতে পারে। মাত্র ১৫ মিনিটের দুরত্বে দাঁড়িয়ে আছে তাবড় দুই স্টেশন হাওড়া ও শিয়ালদহ। ৫ মিনিটের তফাতে অপেক্ষা করছে এসপ্ল্যানেড। আদ্যোপান্ত কাজপাগল শহরের এই খোপের ভিতর ব্রডওয়ে যেন এক ছদ্মবেশী মেহফিল। যেখানে জিরিয়ে নেওয়া যায়, যেখানে ভিজিয়ে নেওয়া যায় মুহূর্তকে। কীভাবে বিকেল ফেরা মানুষ সন্ধেমুখর হয়, এখানে না এলে বিশ্বাস হয় না।
কাঠের চেয়ার-টেবিল, ফিকে হয়ে আসা টেবিল ক্লথ, মৃদু কিন্তু স্বচ্ছ হলুদ আলোর এক গুঞ্জন।
এই ঠেকে বিভিন্নরকম অ্যালকোহল ছাড়াও নরম পানীয় এবং চাইলে কফিও মেলে। বাটার চিলি গার্লিক ফিস, চিলি মাস্টার্ড চিকেন ইত্যাদি বেশ কিছু রেসিপির জন্যও ঘরে ফেরা লোক এখানে ফিরে আসে বারবার। এই বিরাট শহরের ঝা-চকচকে পরিসরে এদের খাবারের দামও তুলনায় বেশ কম। এখানে জল পরিবেশন করা হয় ফুরিয়ে যাওয়া ওল্ড মঙ্ক-এর বোতলে, যা এদের ওয়েটারদের উর্দির মতোই অভিনব। ভিতরে ধূমপান নিষিদ্ধ, মগজে ধোঁয়া দিতে চাইলে বেরিয়ে আসতে পারেন বাইরে, ফুটপাথে। আগুন ছুঁয়ে ফের ফিরে যাওয়া বরাদ্দ চেয়ারে।
দুটো মুখোমুখি চেয়ার কতরকম গল্প রেখে দেয় মাঝের টেবিলে, গ্লাসের বরফে, রাত হয়ে আসা প্লেটে.. আর আপনি? স্কচের মেজাজটুকু গায়ে মেখে ফিরে যান বাড়িতে, কিন্তু মন বারবার উদাস হয়ে যায়, হলদেটে কলেজ জীবনে...
ছবি ঋণ - tripadvisor.com