বড়োদিন এলেই ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রে এক ধাক্কায় বেড়ে যায় গাছের চারার বিক্রি। পাইন, ফার কিংবা স্প্রুসের চারা কিনে আনেন সাধারণ মানুষ। না, বৃক্ষরোপণ নয়। ক্রিসমাস ট্রি (Christmas Tree) হিসাবে ব্যবহার করা হয় এইসব গাছ। ঘর সাজানো হয় তাদের দিয়ে। তারপর উৎসবের মরশুম পেরোলেই সেগুলিকে ফেলে দেওয়া হয় আবর্জনা হিসাবে। অথচ, এই গাছগুলিকেই যদি রোপণ করা যায়, তবে খানিকটা হলেও প্রতিরোধ গড়ে ওঠে জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change)।
এই চিন্তাভাবনা থেকেই বছর কয়েক আগে পথ চলা শুরু করেছিলেন ব্রিটেনের ইয়র্কশায়ারের ৪৪ বছর বয়সি বাসিন্দা সারা টমকিন্স (Sara Tomkins)। বছর দুয়েক আগের কথা। ২০১৯ সালে একটি বিশেষ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন সারা। ‘রুটেড’-খ্যাত (Rooted) এই সংস্থা টাকার বিনিময়ে ভাড়া দেয় পাইন, ফার, স্প্রুস কিংবা দেবদারু গাছ। বড়োদিনের উৎসব পেরিয়ে গেলে গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়ে সেই গাছ আবার ফিরিয়ে আনেন সারা। ২০২০ সালের বড়োদিন থেকেই এই পরিষেবা দিয়ে আসছে সারার ‘রুটেড’।
সাধারণত, বাজারে যে ক্রিসমাস ট্রি কিনতে পাওয়া যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেগুলির শিকড় কেটে দেওয়া হয় বিক্রির সময়। ফলে, এই চারাগুলিকে নতুন করে রোপণ করা যায় না। অন্যদিকে সারা ছোট্ট চারা রোপণ করেন মাটির টবে। সারাবছর ধরেই পরিচর্যা চলে তাদের। এমনকি ক্রিসমাস ট্রি উৎপাদনের জন্য দুই একর জমির ওপর আস্ত একটি নার্সারিও গড়ে তুলেছেন তিনি। বড়োদিনের সময় টব সমেতই এই গাছ পৌঁছে দেওয়া হয় উপভোক্তাদের বাড়িতে। ফলে, পরবর্তীতে যে-কোনো সময়ই প্রকৃতিতে রোপণ করা যায় এই গাছগুলি। পাশাপাশি, ক্রিসমাস ট্রি সাজানোর সময় ব্যবহার করা হয় প্লাস্টিকের বহু সামগ্রী। ক্রিসমাস ট্রি ফেলে দেওয়ার পর, সেগুলিও মেশে পরিবেশে। তবে সারার এইধরনের আবর্জনাগুলিকে পৃথক করে তুলে দেন প্লাস্টিক প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রের হাতে। দেখতে গেলে, সেদিক থেকেও পরিবেশ বাঁচাচ্ছেন তিনি।
গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী, ২ ফুট উচ্চতা থেকে ৮ ফুট উচ্চতার ক্রিসমাস ট্রি পাওয়া যায় সারার এই সংস্থায়। সাধারণত, ক্রিসমাস ট্রি-এর উচ্চতা ৮ ফুটের বেশি হয়ে গেলে, তা ঘর সাজানোর উপযুক্ত থাকে না। এইধরনের গাছগুলিকে নার্সারি থেকে সরিয়ে সারা রোপণ করেন নিকটবর্তী নদী তীরবর্তী অঞ্চলে। ২০০৫-২০২০— এই ১৫ বছরের মধ্যেই ৮ বার বন্যার শিকার হয়েছে ইয়কর্শায়ারের হেবডেন ব্রিজ, টোডমরডেন এবং ওয়েস্ট ইয়র্ক শহর। তাই বৃক্ষ রোপণের জন্য এই তিনটি শহরকেই বেছে নিয়েছেন ব্রিটিশ উদ্যোক্তা। বিগত দু’বছরের পরিসংখ্যান বলছে, নদী তীরবর্তী অঞ্চলে এখনও পর্যন্ত সহস্রাধিক পাইন, ফার ও স্প্রুস রোপণ করেছেন সারা। বৃক্ষরোপণের এই প্রক্রিয়া বন্যা প্রতিরোধ এবং ভূমিক্ষয় রোধে আগামীদিনে বড়ো ভূমিকা রাখবে বলেই আশাবাদী তিনি। সেইসঙ্গে ধীর হবে জলবায়ু পরিবর্তনের গতিও। সবমিলিয়ে টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার পথ দেখাচ্ছে সারার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ…
Powered by Froala Editor