তখন পুরোদমে চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। আর যুদ্ধের নিয়মই হল নতুন নতুন ভূখণ্ড দখল করা। সেইসঙ্গে নিজের ভূখণ্ড রক্ষাও করতে হবে। এমনই এক সময় শোনা গেল, জার্মানি বাহিনী এগিয়ে আসছে সুয়েজ খালের দিকে। আর তাদের সঙ্গে আছে অনেক মিসাইল। স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত ইংল্যান্ড। এমন সময় দায়িত্ব দেওয়া হল জ্যাস্পার মাস্কলাইনের উপর। ভাবছেন, নিশ্চয়ই ইনি তাহলে বেশ দক্ষ কোনো কর্নেল বা লেফটেন্যান্ট হবেন। না, আদৌ বিষয়টা তেমন নয়। মাস্কলাইন ছিলেন একজন ম্যাজিশিয়ান। আর তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ রঙ্গমঞ্চ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
যাই হোক, জ্যাস্পারের অনবদ্য ম্যাজিকে সেদিন চোখে সর্ষে ফুল, বা ওইরকম কিছু একটা দেখেছিল জার্মান বাহিনী। অন্তত ইংল্যান্ডের সেনাবাহিনী তারা দেখতে পায়নি। বদলে নিজেদের বিমানে ঠোকাঠুকি লাগিয়ে বেশ কয়েকজন আহত অবস্থায় ফিরে যায় স্বদেশে। পরে জ্যাস্পার জানিয়েছিলেন, এই ম্যাজিকের পিছনে আছে নাকি কেবল আয়না। ঠিক তেমনই এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছিল জার্মানির নৌবাহিনীর এক জেনারেলের সঙ্গে। তিনি গিয়েছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া বন্দর দখল করতে। আশা করেছিলেন বেশ খানিক যুদ্ধ হবে। কিন্তু একের পর এক মিসাইল ছুঁড়ে যখন তিনি জঙ্গল একেবারে জ্বালিয়ে দিলেন, তখনও কেউ উলটো দিক থেকে একটা ঢিলও ছুঁড়ল না? ভারী আশ্চর্য হয়েছিলেন জেনারেল। তবে মনে মনে এই ভেবে সুখ পেয়েছিলেন যে দারুণ দুর্ধর্ষ জার্মান বাহিনীর আগমনের খবর পেয়ে প্রতিপক্ষ পালিয়েছে। কিন্তু পরে দেশে ফিরে তিনি শুনলেন, আলেকজান্দ্রিয়া যেমন ছিল তেমনি আছে। জেনারেল খানিকটা ফাঁকা জায়গায় মিসাইল ছুঁড়ে এসেছেন।
অন্যান্য ম্যাজিশিয়ানদের মতোই স্টেজের রঙ্গরসিকতা দিয়েই পেশায় প্রবেশ জ্যাস্পার মাস্কলাইনের। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই তাঁর মনে হয়, এমন মামুলি ম্যাজিক দেখানোর কোনো মানে হয় না। করতে হলে বড়ো কিছু করতে হবে। এমন সময় কজন ছুতোর, একজন বিদ্যুৎ মেকানিক, একজন কেমিস্ট, একজন আরকিটেক্ট এবং একজন চিত্রকর ও একজন চিত্র সংরক্ষণ বিশেষজ্ঞকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুললেন ম্যাজিক গ্যাং। কিন্তু কোত্থেকে কী হল, এই দলকে আর রঙ্গমঞ্চে দেখা গেল না। বদলে ইংল্যান্ড সরকার তাঁদের যুদ্ধে পাঠিয়ে দিল। তখনও অবশ্য জার্মানির বিরুধে ইংল্যান্ড কোনো সাফল্যই পায়নি। কিন্তু প্রথম যুদ্ধেই সেই প্রবল পরাক্রমী জার্মান বাহিনীকে বিনাযুদ্ধে হারিয়ে দেয় ম্যাজিক গ্যাং। মাত্র সাতজনেই কুপোকাত করলেন অন্তত কয়েক হাজার সৈনিকের একটি বাহিনীকে। এমনকি সঙ্গে অস্ত্রও খুবই সাধারণ। কিন্তু মজার ব্যাপার জার্মান বাহিনী নাকি দেখেছিল এক বিরাট বাহিনী পাঠিয়েছে ইংল্যান্ড, আর তাদের সঙ্গে বিরাট বিরাট উন্নত মিসাইল। এদের সঙ্গে পেরে ওঠা সম্ভব নয় জেনেই অবশেষে পলায়ন। কিন্তু জ্যাস্পার পরে জানিয়েছিলেন তাঁরা সাতজন ছাড়া আর কোনো জীবিত প্রাণীই সেখানে ছিল না।
কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে রঙ্গমঞ্চে আর তেমন সাফল্য পায়নি ম্যাজিক গ্যাং। কারণ তাদের গুরুত্বপূর্ণ সব আবিষ্কারই ততদিনে যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে। আর সেইসব ম্যাজিক জনসাধারণের সামনে প্রকাশের কোনো অধিকার তাঁদের নেই। আজও অদ্ভুত সেসব ম্যাজিকের রহস্য গোপন তথ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। তবে ২০৪৬ সালের পর আইন মেনে প্রকাশ্যে আসতে পারে সেই কৌশল।
Powered by Froala Editor