কৃত্রিম পায়েই তিনটি পর্বতশৃঙ্গ জয় ইংল্যান্ডের অভিযাত্রীর

২০ মিনিটের বেশি একটানা হাঁটতে পারেন না তিনি। মাইল তিনেক হাঁটার পরেই ডান পা খুলে রেখে বিশ্রাম নিতে হয়। হ্যাঁ, এই কৃত্রিম পা-ই তাঁর হাঁটার সম্বল। অথচ এর ওপর ভর দিয়েই তিনি জয় করে ফেলেছেন ইংল্যান্ডের তিনটি সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। মাত্র ২৭ ঘণ্টায় তিনটি শৃঙ্গ জয় করে রীতিমতো চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছেন ইয়র্কশায়ারের অধিবাসী বেন লোভেল।

৪২ বছরের বেন লোভেল আগে একটি রাস্তা নির্মাণ সংস্থায় কাজ করতেন। তখনই একটি দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। বছর তিনেক আগে ডান পায়ে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ায় তা হাঁটুর নিচ থেকে বাদ দিতে হয়। এরপর কর্মহীন হয়ে পড়েন বেন। কিন্তু পাশাপাশি খুঁজে পান অন্য একটি কাজের ঠিকানা। তাঁর মতো আরও অসংখ্য মানুষ, যাঁরা এই ধরণের প্রতিবন্ধকতার শিকার, তাঁদের প্রত্যেকের সম্মানের জন্য লড়াই। আর এই সম্মান অর্জন করতে গেলে প্রথমেই প্রমাণ করতে হবে, তাঁরাও বাকিদের চেয়ে আলাদা নন।

নিজের সামর্থ্যের পরিচয় দিতে সম্প্রতি তিনটি পর্বত অভিযানের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তিনি। হেলভেলিন, স্ক্যাফেল এবং স্ক্যাফেল পিক। তিনটি পর্বত জয়েই সফল হয়েছেন তিনি। প্রথমটি জয় করতে সময় লেগেছে ৭ ঘণ্টা, দ্বিতীয়টিতে ৯ ঘণ্টা এবং শেষ শৃঙ্গ জয়ে সময় লেগেছে ১১ ঘণ্টা। অর্থাৎ মাত্র ২৭ ঘণ্টায় জয় করেছেন তিনটি শৃঙ্গ। শুধু পর্বতারোহণই নয়, এর আগে আরও নানা বিপজ্জনক কাজের ঝুঁকি নিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে ২০ মিনিটের বেশি একটানা হাঁটা সম্ভব নয়। কিন্তু ক্রাচে ভর দিয়েই একটি জলাশয়ের ১৩ মাইল পরিধি পরিভ্রমণ করেছেন তিনি। এছাড়া ১৫ হাজার ফুট উঁচু থেকে ঝাঁপ দিয়েছেন প্যারাসুটের সাহায্যে। তবে হেলভেলিনের মতো দুর্গম শৃঙ্গ জয় করতে বেশ কষ্ট হয়েছে বলেই জানিয়েছেন বেন।

এই সমস্ত কাজের ভিতর দিয়ে তিনি যেমন নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিতে পেরেছেন, তেমনই মিলেছে অর্থও। আর এই অর্থই তাঁর এবং তাঁর সন্তানদের বেঁচে থাকার একমাত্র রসদ। পাশাপাশি তিনি তৈরি করেছেন ‘অ্যাম্পক্যাম্প’ নামের একটি সংস্থাও। যেখানে কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহারকারীদের নিয়েই এমন নানা অভিযানের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বেন মনে করেন, আজও ইংল্যান্ডের সব মানুষ কৃত্রিম অঙ্গ ব্যবহারের বিষয়ে সমান সচেতন নন। অনেক সময়েই পোশাকের আড়ালে ঢেকে রাখতে হয় তাদের। যন্ত্রণা শুরু হলেও সর্বসমক্ষে খুলে রাখতে পারেন না প্রস্থেটিক হাত-পা। তবে এভাবেই ধীরে ধীরে হয়তো বদলাবে ছবিটা। বেনের মতো মানুষের জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হবে বহু বছরের কুসংস্কার।

আরও পড়ুন
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই অসংখ্য মানুষকে দিনবদলের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন আরমান

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তৈরি ক্যাফে, ধুঁকছে লকডাউনের পরেও