ভারত তো বটেই, বিশ্বের বহু দেশে আজও স্বমহিমায় চলছে পণপ্রথা। পাশাপাশি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বিবাহের পর অনেকক্ষেত্রেই স্বাধীনতা খর্ব হয় মহিলাদের। কোনো কোনো প্রথায় আবার পুরুষদের অধিকার দেওয়া হয়েছে যদৃচ্ছ বিবাহবিচ্ছেদের। তিন তালাকই তার অত্যন্ত পরিচিত একটি উদাহরণ। কিন্তু এই সমীকরণই যদি উল্টে দেওয়া যায়? হ্যাঁ, দক্ষিণ সুদানে এমনই প্রচলিত রয়েছে এমনই এক প্রথা। বিবাহের পর চার বছর শ্বশুরবাড়ির পরিবেশ পরখ করে দেখার সুযোগ পান সেখানকার মহিলারা (Brides)। স্বামীকে পছন্দ না হলে, চাইলে ‘ডিভোর্স’-ও দিতে পারেন তাঁরা।
ডিনকা বিবাহ হিসাবেই পরিচিত এই বিশেষ প্রথা। আদতে ডিনকা (Dinka Tribe) হল দক্ষিণ সুদানের (South Sudan) একটি প্রাচীন জনগোষ্ঠী। নীল নদের তীরবর্তী অঞ্চলেই মূলত বসবাস এই নৃগোষ্ঠীর মানুষদের। শুধু ডিনকাই নয়, একইসঙ্গে নুয়ের এবং অ্যাটুওট সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যেও প্রচলিত রয়েছে এই একই প্রথা। সুদানের এই নৃগোষ্ঠীগুলি পুরুষতান্ত্রিক হলেও, সমাজে নারীদের সম্মান এবং ক্ষমতা— উভয়ই রয়েছে যথেষ্ট।
সাধারণত, কোনো মহিলাকে বিবাহ করতে গেলে ১০০ থেকে ৫০০টি গরু যৌতুক হিসাবে প্রদান করতে হয় পাত্রপক্ষকে। পাশাপাশি বিবাহের পর শ্বশুর বাড়িতে রাজকীয় আপ্যায়ন করা হয় মহিলাদের। টানা ৪ বছর কোনোরকম কাজই করতে হয় না তাঁদের। বরং, এই সময়টা নববধূর বিশ্রামের সময়। শ্বশুরবাড়ির আচার এবং পারিবারিক ঐতিহ্যকে অধ্যয়ন করাই তাঁর একমাত্র কাজ। স্থানীয় ভাষায় এই প্রথাকে বলা হয় ‘অ্যানিউক’। যার বাংলা অর্থ হল ‘সাদর আমন্ত্রণ’। অথচ, রান্না করা থেকে শুরু করে গৃহস্থের সমস্ত ক্ষেত্রেই ডিনকা পুরুষরা সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল মহিলাদের ওপর। তবে কীভাবে সংসার চলে বিবাহ পরবর্তী এই চার বছর?
স্বাভাবিকভাবে এই সময়টায় গৃহস্থের সমস্ত কাজের দায়িত্ব নিতে হয় ননদকে। রান্না থেকে শুরু করে বাসন ধোয়া, ঘর পরিষ্কার, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা, জল আনা ও অন্যান্য সমস্ত গৃহস্থালির কাজ করে থাকেন স্বামীর অবিবাহিত বোন।
আরও পড়ুন
কবি মাত্রেই পুরুষ নয়, প্রথা ভেঙে মহিলা কবিদের আসর সোমালিয়ায়
বিবাহের ৪ বছর পর এক বিশাল পারিবারিক আনুষ্ঠানের আয়োজন হয় শ্বশুরবাড়িতে। স্থানীয় ভাষায় ‘থাট’-খ্যাত সেই অনুষ্ঠানেই আনুষ্ঠানিকভাবে সংসারের দায়িত্ব নেন স্ত্রী। সেই অনুষ্ঠানেও নিমন্ত্রিত অতিথিদের রান্না একা হাতে করতে হয় তাঁকে।
আরও পড়ুন
জ্বলন্ত মশাল দিয়ে মাছ শিকার! মৃত্যুর পথে তাইওয়ানের প্রাচীন প্রথা
তবে বিবাহ পরবর্তী ৪ বছরে যদি স্বামী বা শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়দের পছন্দ না হয়, তাহলে বিনা বাধায় স্বামীকে পরিত্যাগ করতে পারেন নববধূ। এক্ষেত্রে ডিভোর্সের জন্য বিবাহের সময় নেওয়া পণ বা যৌতুক কোনো কিছুই ফেরত দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও থাকে না তাঁদের। আমাদের প্রথাগত সমাজব্যবস্থার ঠিক উল্টোমুখেই যেন চলছে এই সুদানের ধারা। আকর্ষণীয় বিষয় হল, ডিনকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত রয়েছে বহুবিবাহের প্রথাও। সেখানেও নারীরা সমানাধিকার পান পুরুষদের মতোই। ফলে গোটা সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক অবিবাহিত ব্যক্তি খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর। দক্ষিণ সুদানের প্রান্তিক অঞ্চলের এই জনগোষ্ঠীর যাপনচিত্রকে বর্ণময় না বলে উপায় নেই কোনো…
আরও পড়ুন
সেনাবাহিনীতে নিয়োগের জন্য কুমারীত্ব পরীক্ষা! ইন্দোনেশিয়ার ঘৃণ্য প্রথার ইতি
Powered by Froala Editor