শ্মশানবন্ধুর ভূমিকায় লড়াই, ‘প্রথা’ ভাঙছেন কোচির মহিলা

লিঙ্গবৈষম্যের কথা উঠলেই বার বার সরকারি কিংবা বেসরকারি কর্মক্ষেত্রের পরিসংখ্যানই তুলে আনা হয়। কিন্তু শুধুই কি ব্লু-কলার চাকরির ক্ষেত্রে এই বৈষম্য? অসংগঠিত ক্ষেত্রে আজও অনেকাংশেই ব্রাত্য মহিলারা। এই বৈষম্যেরই বেড়াজাল ভাঙছেন কোচির কাক্কানড়ের সেলিনা মিচেল (Selina Michel)।

বিগত দেড় দশক ধরে শ্মশানবন্ধু (Crematorium Worker) বা দাহকর্মীর ভূমিকা পালন করে চলেছেন সেলিনা। স্থানীয় ভাষায় যাঁদের বলা হয় ‘ডোম’। চিতার কাঠ সংগ্রহ থেকে শুরু করে মৃতদেহ দাহ করা, শ্মশান পরিষ্কার, শেষকৃত্যের আচার-অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা— সবটাই একা হাতে সামলান সেলিনা। তবে খুব কিছু সহজ ছিল না এই কাজ। বলতে গেলে বেশ লড়াই করেই তাঁকে ছিনিয়ে নিতে হয়েছে শ্মশানবন্ধুর ভূমিকা। 

প্রথম দশকের মাঝামাঝি সময় সেটা। বলতে গেলে দুই ছোট্ট সন্তান নিয়ে পথে বসতে হয়েছিল সেলিনাকে। নতুন বিবাহ করে গ্রাম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তাঁর স্বামী। তিনটে পেট চালানো তো আর মুখের কথা নয়। সংসারের হাল ধরতে তাই কখনো রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসাবে কাজ করেছেন, আবার কখনো করেছেন গৃহ পরিচারিকার কাজ। ২০০৭ সালে সেভাবেই সাফাইকর্মী হিসাবে শ্মশান চত্বরে পা রাখেন সেলিনা। 

সেলিনা নতুন কাজে যোগ দেওয়ার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সংশ্লিষ্ট শ্মশানের তৎকালীন দাহকর্মী। মূলত, দাহকর্মীর ভূমিকা পালন করে থাকেন ডোম সম্প্রদায়ের মানুষরা। কাক্কানড়ের শ্মশান দাহকর্মী-শূন্য হয়ে যাওয়ার পর বিশেষ টেন্ডারের আয়োজন করে সংশ্লিষ্ট পৌরসভা। অথচ, সেই টেন্ডারে হাজির ছিলেন না কোনো ডোম সম্প্রদায়ের মানুষ। পরিস্থিতি বুঝে বাড়তি উপার্জনের তাগিদে এগিয়ে আসেন সেলিনা। শেষ পর্যন্ত তাঁর কাঁধেই তাই তুলে দেওয়া হয় এই শ্মশানবন্ধুর দায়িত্ব। 

আরও পড়ুন
প্রাণীদের সঙ্গে কথপোকথন, পোষ্যের ভাষা শেখাচ্ছেন মার্কিন মহিলা

তবে পৌরসভার এই বিধান মেনে নেননি সাধারণ মানুষ। সেলিনাকে কটূক্তির শিকার তো হতে হতই, সেইসঙ্গে বহু মানুষই প্রিয়জনের দেহ দাহ করতে রাজি হতেন না মহিলা শ্মশানবন্ধুকে দিয়ে। তার ওপর সেলিনা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষের রোষ এসে পড়ত তাঁর ওপর। আর সমাজ? বলতে গেলে তাঁকে এক ঘরে করে তুলেছিল চারপাশের মানুষজন। 

আরও পড়ুন
ভারতের প্রথম মহিলা বাউন্সার, প্রথাগত ধারণা বদলাচ্ছেন উত্তরপ্রদেশের মেহরুন্নিসা

তবে সময় সব ক্ষতই সারিয়ে তোলে ধীরে ধীরে। বিগত ১৫ বছরে অনেকটাই পাল্টেছে পরিস্থিতি। অনেকটাই সচেতন হয়েছেন সাধারণ মানুষ। বর্তমানে পৌরসভা থেকে ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে দেওয়ার ভারও তাঁর কাঁধেই। মহামারীর সময় পিপিই কিট পরে কোভিড আক্রান্তদের দেহও দাহ করেছেন তিনি। দেখতে গেলে কোচির প্রচলিত ধ্যানধারণার বিরুদ্ধে গিয়েই যেন লড়াই করে চলেছেন সেলিনা মিচেল। একটা সময় কোচি তথা কেরলের একমাত্র মহিলা দাহকর্মী ছিলেন তিনি। বর্তমানে গোটা দক্ষিণ ভারতজুড়ে এই ভূমিকায় নেমেছেন আরও বহু মহিলা। সেলিনাই যেন পথ দেখাচ্ছেন তাঁদের…

আরও পড়ুন
দোলে বীরহোড় মহিলাদের তৈরি পলাশ ফুলের আবিরে সাজছে বাংলা!

Powered by Froala Editor