মৃত আত্মীয়ের ঘিলু খেয়ে ধর্ম পালন! পঞ্চাশ বছর আগেও রমরমিয়ে চলত এই ‘আদিম’ প্রথা

ক্রমাগত কথা বলে গেলে সঙ্গের মানুষটি একসময় বিরক্ত হয়ে বলেই বসে, ‘আর মাথা খেও না।’ এরকম কথা শোনার অভ্যাস আমাদের সকলেরই। কিন্তু কথাতেই নয়, আক্ষরিক অর্থেই মাথা খেত একদল মানুষ! হ্যাঁ, নরখাদক। একটা সময় গল্পে-কাহিনিতে এদের কথা পড়েছি অনেকে। কিন্তু নরখাদক আদিম মানবেরা যে এই সেদিনও বহাল তবিয়তে বসবাস করত, সেটাও এক আশ্চর্য বাস্তব। তাদেরই এক জাতভাইদের নিয়ে এই কাহিনি। যাদের খাদ্যই ছিল মানুষের মগজ! আর তার ভেতরেই নাকি লুকিয়ে ছিল একটা মারণ রোগের প্রতিষেধক!

ওশিয়ানিয়ার এক ছোট্ট দ্বীপ রাষ্ট্র পাপুয়া নিউগিনি। অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের মতো এখানেও স্থানবিশেষে বিভিন্ন গোষ্ঠীর আদিম মানুষেরা বসবাস করতেন। সেইরকমই একটি অঞ্চল ছিল ফোর। এখানকার বাসিন্দারাই ছিলেন নরখাদক; আরও ভালো করে বললে নর-মগজ খাদক। যখনই এঁদের পরিবারের কেউ মারা যান, তখনই তাঁর ঘিলু খাবার হিসেবে খেয়ে নিতেন এঁরা। তখনকার সময় গোষ্ঠীবিবাদ তো লেগেই থাকত। অন্য গোষ্ঠীকে হারালে মৃতদের ঘিলুও খেতেন এঁরা। এক কথায় বীভৎস ব্যাপার! কিন্তু এঁদের কাছে এটাই ধার্মিক প্রথা। রোজকার কাজের মতোই অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার! পঞ্চাশ-ষাটের দশকে যখন বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটছে ধীরে ধীরে সব জায়গায়, যখন চাঁদে মানুষ পৌঁছে যাচ্ছে; তখনও এখানে এই প্রথা রমরমিয়ে চলেছে… 

সমস্যাটা শুরু হল ষাটের দশকে এসে। এই সময় হঠাৎই অজানা একটা রোগ ছড়িয়ে পড়তে লাগল পাপুয়া নিউগিনিতে। বিশেষ করে এই জনগোষ্ঠীর মানুষরা যেখানে যেখানে থাকতেন, সেখানে। স্থানীয় ভাষায় রোগটিকে বলা হত ‘কুরু’। সরাসরি কথা বলা বন্ধ হয়ে যেত; তারপর চলাফেরা বোধ হওয়া, শেষ পর্যন্ত মৃত্যু। একটা সময় প্রায় মহামারীর চেহারা নিয়ে নেয়। শেষ পর্যন্ত রীতিমতো আইন করে নিউগিনি সরকার ঘিলু খাওয়া বন্ধ করে দেয়। আশ্চর্যজনকভাবে, তারপর থেকে রোগটা কমতে থাকে। রোগের কারণ সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। মানুষের মস্তিস্কের ভেতরের দূষিত অংশগুলি থেকেই এই রোগের সৃষ্টি হয়েছিল বলে অনুমান চিকিৎসকদের। 

প্রায় একই সময় আরও একটি রোগের সংক্রমণ শুরু হয়। নাম ‘ম্যাড কাউ’। গরু থেকে মানুষের মধ্যে এই রোগ সংক্রমিত হওয়ার জন্যই এমন নাম দেওয়া হচ্ছিল। দেশ বিদেশের বিজ্ঞানীরা এর প্রতিষেধক নিয়ে গবেষণা করতে লাগলেন। এই সময় লন্ডন ইউনিভার্সিটির এক গবেষক এক অদ্ভুত জিনিস দেখেন। মনে পড়ে যায় মাত্র কয়েকদিন আগেই ‘কুরু’ রোগের কথা। সেখানেই তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখেন, কুরু রোগে মানুষ মারা গিয়েছিলেন ঠিকই। এমন বেশ কিছু মানুষ ছিলেন, যারা কুরু আক্রান্তের মগজ খেয়েও দিব্যি বেঁচেছিলেন। তিনি আরও দেখেন, ম্যাড কাউ আর কুরু রোগের লক্ষণও মোটামুটিভাবে একই। তিনি ওই লোকের ডিএনএ বা জিন জোগাড় করেন। সেখান থেকে তৈরি করেন প্রতিষেধক। ব্যস, তাতেই কেল্লাফতে! পরে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেন, জাপানিদের বাদ দিলে পৃথিবীর সব প্রজাতির মানুষের পূর্বপুরুষই কোনো না কোনো সময় মানুষখেকো ছিল। কাজেই সবার মধ্যে ওই বিশেষ জিনটি রয়েছে। কিন্তু ওই মুহূর্তে গবেষণা করে ওষুধ বের করে অনেক লোকের প্রাণ তো বাঁচিয়েছিলেন ওই গবেষক! 

আরও পড়ুন
পূর্বপুরুষের হাড় দিয়ে বানানো হত বাঁশি, ব্রোঞ্জযুগের অজানা প্রথার সন্ধান

Powered by Froala Editor