নিলামে উঠল হাতি শিকারের প্যাকেজ, ‘নারকীয়’ পদক্ষেপ বতসোয়ানায়

ট্রেনের ধাক্কায় মৃত হাতি। কিংবা, বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে হাতির মৃত্যু। কখনও আবার খাদে পরে প্রাণহানি। এমন খবর আমরা প্রায়ই দেখতে পাই হেডলাইনে। ভুলেও যাই। কিন্তু তার ফাঁকে যে কী পরিমাণে বন্যপ্রাণ ধ্বংস হচ্ছে, সে-খেয়াল রাখি না। সম্প্রতি, বতসোয়ানার সরকারের একটি ঘোষণায় নড়েচড়ে বসেছে গোটা বিশ্বই। হাতি হত্যার ওপর থেকে আইনি নিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছিল আগেই। এবার, নিলামে তোলা হল হাতি শিকারের ‘প্যাকেজ’!

শুধু ভারতবর্ষেই নয় সারা পৃথিবী জুড়েই চলছে বন্যপ্রাণ ধ্বংসের খেলা। আর এই ধ্বংসলীলার অন্যতম শিকার হল বন্য হাতি। সম্প্রতি বতসোয়ানা সরকার ষাটটি হাতি শিকারের একটি প্যাকেজ নিলাম করল। যেখানে প্রতিটি শিকারের মূল্য নির্ধারিত হয় প্রায় ৪৩০০০ ডলারের বিনিময়ে। একটি সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানা যাচ্ছে, কিছু বেসরকারি সংস্থা এইসব শিকারের প্যাকেজ কিনে নিয়েছে এবং তা তারা শিকারিদের কাছে চড়া দামে বিক্রি করছে। এক্ষেত্রে প্যাকেজের রেট ৩,২৬,৫২০ ডলার অবধিও উঠেছে। এই সব শিকারিদের মধ্যে বেশিরভাগই আমেরিকান। এই দেশের সরকার আরো একটি কোটাও চালু করে, যাতে চলতি বছরে শিকারিরা মোট ২০২টি হাতি মেরে তা ট্রফি হিসাবে রপ্তানি করতে পারে।

সমীক্ষা বলছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হাতি রয়েছে বতসোয়ানাতেই। সংখ্যাটি প্রায় ১,৩০,০০০-এর কাছাকাছি। দেশের নতুন নির্বাচিত সরকারের মতে, হাতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় হাতিরা ক্রমাগতভাবে মানুষের সংস্পর্শে আসছে ও জনজীবন ব্যাহত করছে।

অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের সমীক্ষা অনুযায়ী, এশিয়ার হাতিরা যথেষ্ট বিপন্ন প্রাণী এবং আফ্রিকার হাতিরাও বিপদ সীমার বাইরে নয়। এই বিপন্নতার কারণ সাধারণত চোরাশিকার এবং তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থানের সংকট। হাতি শিকারের প্রধান কারণ হল হাতির দাঁত, যা বাজারদর অনুযায়ী অত্যন্ত মূল্যবান। মাইলের পর মাইল বন সাফ করে বসতি গড়ার ফলে হাতিরা তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থান হারাচ্ছে। দেখা দিচ্ছে খাদ্যের অভাব। তাই খাবারের সন্ধানে তারা মাঝেমধ্যেই লোকালয়ে চলে আসছে। আর তখনই বাঁধছে সংঘাত।

গত বছর জিম্বাবোয়েতে খরার কারণে দুশোরও বেশি হাতির মৃত্যু হয়েছে। গত দুই দশক ধরে আফ্রিকায় হাতির সংখ্যা অনেকটাই কমে আসছে। সেখানে বতসোয়ানা সরকারের এরকম একটি সিদ্ধান্ত কি ঠিক? এরকম একটি সিদ্ধান্তের ফলে এশিয়ার মতো আফ্রিকাতেও হাতিরা বিপন্ন হয়ে পড়বে না তো? উঠছে নানারকম প্রশ্ন। ভেবে দেখার দায়িত্ব পাঠকের হাতেই তুলে দেওয়া হল।