আজ থেকে প্রায় দুশো বছর আগের কথা। ভারতে তখন জাঁকিয়ে বসেছে ব্রিটিশদের আধিপত্য। তবে শুধু ব্রিটিশ শাসক কিংবা ব্যবসায়ীদের কাছেই নয়, ব্রিটিশ গবেষকদের কাছেও আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল ভারত। এই দেশের ভূপ্রকৃতিই যে সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্রিটেনের থেকে। ফলত, গোটা দেশের বাস্তুতন্ত্রটাই একেবারে অনন্য, আনকোরা। গবেষণার সেই সুযোগটাই লুফে নিয়েছিলেন ব্রিটিশ গবেষকরা। ১৭৮৭ সালে কর্নেল রবার্ট কাইডের হাত ধরে কলকাতার নিকটবর্তী শিবপুরে তৈরি হয়েছিল রয়্যাল বোটানিক্যাল গার্ডেন (Botanical Garden)। অল্পদিনের মধ্যেই যা ঘাঁটি হয়ে ওঠে উদ্ভিদবিদদের।
কিন্তু শুধু গবেষণা বা আবিষ্কারই তো শেষ কথা নয়, ভারতের বুকে খুঁজে পাওয়া এইসব উদ্ভিদ প্রজাতিগুলির তথ্য সংরক্ষণও সমানভাবে করা দরকার। সেই কাজে প্রথম হাত লাগিয়েছিলেন ব্রিটিশ উদ্ভিদবিদ উইলিয়াম গ্রিফিথ। ১৮৪০-এর দশক সেটা। তখনও ক্যামেরা এসে পৌঁছায়নি মানুষের হাতে। ফলত, উদ্ভিদের বর্ণনা এবং ছবি সংরক্ষণের চিত্রশিল্পকেই হাতিয়ার করে নিয়েছিলেন গ্রিফিথ। অরুণাচলের শিল্পী লুচমান সিং-কে দিয়ে আঁকিয়েছিলেন অভিনব একটি অর্কিড হোলোপারাসিটিক-এর ছবি। সেই শুরু। পরবর্তী একশো বছরে ভারতে সংগৃহীত ও চিত্রিত হয়েছে কয়েক হাজার বোটানিক্যাল চিত্র (Botanical Paintings)।
এতদিন পর্যন্ত সেইসব বৈজ্ঞানিক চিত্র সংরক্ষিত ছিল শিবপুরের জগদীশচন্দ্র বসু বোটানিক্যাল গার্ডেনে। এবার সেই ঐতিহাসিক সম্ভারের সাক্ষী থাকতে পারবেন সাধারণ মানুষ। ডিজিটালাইজেশনের (Digital Archive) সৌজন্যে এক ক্লিকেই ঘুরে দেখা যাবে ভারতে প্রাপ্ত জানা-অজানা নানান উদ্ভিদ প্রজাতিদের। যার মধ্যে অনেক প্রজাতির অস্তিত্বও মুছে গেছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।
বোটানিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’র বিবৃতি অনুযায়ী সব মিলিয়ে প্রায় ৩২৮০টি বোটানিক্যাল চিত্র সংরক্ষণ করা হয়েছে এই ডিজিটাল মিউজিয়ামে। বিভিন্ন সময়ের প্রায় ২০ জন শিল্পী জড়িত ছিলেন এই চিত্রশিল্পের সঙ্গে। তার মধ্যে লুচমান সিং ও বাঙালি শিল্পী গোপাল দাস অন্যতম। তবে শুধু চিত্রই নয়, সেইসঙ্গে ডিজিটাল মিউজিয়ামে জায়গা পেয়েছে তৎকালীন সময়ে সংগৃহীত বিভিন্ন ধরনের সুতো এবং জৈব রং। যা তৈরি করা হত উদ্ভিদ থেকেই। রয়েছে প্রায় ২৭ হাজার গাছের বীজ এবং বহু প্রজাতির গাছের হার্বেরিয়াম শিট। সব মিলিয়ে বলতে গেলে, এ যেন যে-কোনো উদ্ভিদপ্রেমীর কাছে এক স্বর্গরাজ্য। শুধু বিজ্ঞানের গতিপথ নয়, বরং এই আর্কাইভ ভারতের বৈচিত্রতা এবং ইতিহাসেকেও যেন মনে করিয়ে দেবে প্রতি পদেই…
আরও পড়ুন
অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়া হোক তারের বেড়া, গাছের দুর্দশায় প্রতিবাদ পরিবেশকর্মীদের
Powered by Froala Editor