লাইব্রেরি থেকে বই উধাও হয়ে যাওয়া নতুন কোনো জিনিস নয়। কখনো লাইব্রেরি থেকে নেওয়া দুর্মূল্য কোনো বইয়ের বিরলতার জন্যই ইচ্ছাকৃতভাবে আর ফিরত দেন না গ্রাহক। আবার কখনো বই ফিরিয়ে দেওয়া হয়ে ওঠে না নিছকই অন্য কোনো কারণে, ব্যস্ততায়। অনেক সময় আবার বই নিয়ে না পড়ে ওঠার কারণেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বছর ঘুরে যায় লাইব্রেরির বই পেতে। তবে কানাডার একটি লাইব্রেরি সাক্ষী থাকল এক অদ্ভুত ঘটনার। বই নেওয়ার ৮২ বছর পর বই ফিরত দিতে এলেন গ্রাহক। এমন বিরল ঘটনা এর আগে ঘটেছে কিনা বলা মুশকিল।
এমন ঘটনায় রীতিমতো বিস্মিত কানাডার কেপ ব্রেটন রিজিওনাল লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষও। জর্দান মুস্যাকসিন নামের এক ব্যক্তি সম্প্রতি লাইব্রেরি এসে ফিরত দিয়ে যান ‘অ্যাডভেঞ্চারস অফ ডটর ডলিটল’-এর একটি প্রাচীন কপি। মহামারীর জন্য বর্তমানে বাড়ি থেকেই কাজ করতে হচ্ছে তাঁকে। ফলে অনেকটাই সময় পাওয়া যাচ্ছে হাতে। আর সেই অবসরযাপনের জন্যই বাড়ির বইয়ের র্যাকক হাতড়াতে গিয়ে তিনি খুঁজে পান বইটি।
হাতে নিয়েই চমকে ওঠেন মুস্যাকসিন। কারণ বইটি লাইব্রেরি থেকে আনা হয়েছিল ১৯৩৯ সালে। অর্থাৎ ৮২ বছর আগে। এমন দুর্লভ অনুলিপি পাওয়ার কোনো প্রত্যাশাই করতে পারেননি কানাডার এই ব্যক্তি। বইটি পড়া সম্পূর্ণ হওয়ার পরই তিনি ফিরিয়ে দেন লাইব্রেরিতে। মুস্যাকসিন জানান, তিনি যে বাড়িতে থাকেন তার পূর্ববর্তী মালিকের সংগ্রহ থেকেই পেয়েছেন এই বই। বছর দশেক হল তিনি ছেড়েছেন এই বাড়ি। তবে তাঁর পরিবার প্রায় এক শতকেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করেছেন এই বাড়িতে। সম্ভবত তাঁর পরিবারের কোনো সদস্যই বইটি নিয়েছিলেন লাইব্রেরি থেকে।
৮২ বছর পর বই ফিরে পেয়ে অভিভূত লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষও। সম্প্রতি বইটির ছবি তাঁরা পোস্ট করেন সামাজিক মাধ্যমে। বইটির গ্রাহকের পুরো নাম প্রকাশ করেননি তাঁরা। তবে রহস্য করেই জানিয়েছেন তাঁর সংক্ষিপ্ত নাম ‘ভি.এম.’ আর জন্ম ১৯২০ সালে। ওই ব্যক্তি যদি এখনও জীবিত থাকেন বা তাঁর পরিচিত কেউ থাকলে লাইব্রেরিতে যোগাযোগ করার জন্যও অনুরোধ করেন তাঁরা।
বই ফিরত দিতে দেরি হলে লাইব্রেরি মাত্রই দিতে হবে বাড়তি জরিমানা মূল্য। তবে এক্ষেত্রে একটাকারও মাশুল গুনতে হয়নি মুস্যাকসিনকে। তিনি যে বইটির মূল গ্রাহক না, সে জন্য নয়। গত বছর থেকেই কানাডার এই লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছিল ‘লেট ফি’। না হলে ৮২ বছরের জন্য জরিমানা ধার্য হওয়ার কথা কয়েক হাজার মার্কিন ডলার। তবে এসব কিছুর জন্য প্রস্তুতি নিয়েই বইটি ফেরাতে গিয়েছিলেন মুস্যাকসিন। তাঁর সেই উদ্যোগকে সাধুবাদও জানাতেই হয়...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মাদাগাস্কারে ভারতীয় লেখকদের বই নিয়ে স্ট্রিট লাইব্রেরি