নতুন-পুরনো বইয়ের সঙ্গে চায়ের মৌতাত, কলেজ স্ট্রিটের নতুন ঠেক ‘এক কাপ চা’

বাংলা সাহিত্যের পাঠকের কাছে কলেজ স্ট্রিট একটা ঐতিহ্য। নতুন পুরনো কত প্রকাশনা সংস্থার ভাঁড়ারে অজস্র বই। সেইসব বইয়ের হাতছানি ডেকে আনে অসংখ্য পাঠককে। রাস্তায় এখনও ভিড় জমে ওঠে। কিন্তু বই কিনতে যাঁরা যান, বই দেখার সুযোগ তাঁরা পান কি? সেই ভাবনাচিন্তা থেকেই কলেজ স্ট্রিট চত্বরে নতুন উদ্যোগ 'এক কাপ চা'। কলকাতা ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলের পিছনে রমানাথ মজুমদার স্ট্রিটে নতুন এই ক্যাফেটেরিয়া তৈরি করেছেন প্রদীপবাবু, প্রদীপ বারিক।

‘এক কাপ চা’-কে ক্যাফেটেরিয়া বলতে রাজি নন প্রদীপবাবু। কারণ এখানে কফির কোনো ব্যবস্থা নেই। আছে চার-পাঁচ রকমের চায়ের আয়োজন। ‘চায়ের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক অঙ্গাঙ্গী’, তাই কফিকে বাদ দিয়েছেন তিনি। তার সঙ্গে স্ন্যাকস, স্যান্ডুইচ, বার্গারেও বাঙালি রসনার স্বাদ রাখতে চান তিনি। তবে এইসব তো গৌণ ব্যাপার। ‘কেউ এখানে এসে কিছু খেতেও পারেন, নাও পারেন।’ আসল কথা হলো বই পড়া। দেয়াল ভর্তি করে বুকশেলফে আছে বই। পাঠক সেগুলো নিয়ে বসে পড়তে পারেন। তিনটে টেবিলের সঙ্গে রাখা আছে অনেকগুলো মোড়া। বই পড়তে পড়তে ইচ্ছে হলে একটু চা বা স্ন্যাক্সের অর্ডার দিতে পারেন। পছন্দ হলে সেই বই সংগ্রহও করতে পারেন।

এখনও ঘরটি পুরোপুরি সাজিয়ে তুলতে পারেননি তিনি। বইমেলার জন্য পছন্দের অনেকগুলো বই হাতে পাননি। তবে এর মধ্যেই অনেকগুলি বাংলা ইংরেজি বই তাকে তুলেছেন। সেখানে আছে আনন্দ, দে'জ এর মতো নামকরা প্রকাশনা সংস্থার বই। আবার তার সঙ্গেই আছে অনেক নতুন গড়ে ওঠা প্রকাশনীর বই। কথায় কথায় তিনি বলছিলেন, ‘অনেকদিন ধরেই ভাবতাম, নতুন যেসব প্রকাশনা সংস্থার কলেজ স্ট্রিটে কোনো বেস তৈরি হয়নি, পাঠকের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ তাদের যথেষ্ট কম। তাই যদি এক ছাদের নিচে নামিদামি প্রকাশকের বইয়ের সঙ্গেই নতুন প্রকাশকদের বইকেও জায়গা দেওয়া যায়।; সেই ভাবনাচিন্তাকে সামনে রেখেই নতুন উদ্যোগ।

ঘরে ঢুকতেই প্রথমেই নজর কাড়বে সুন্দর সুন্দর মোড়াগুলি। ছিমছাম নিরিবিলি একটা মায়ার জগতে যেন ঢুকে পড়বেন। অবশ্যই আপনার চোখ যাবে দেয়ালের ঘড়িটার দিকে। ঠিক কত প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী সেই ঘড়ি, বলতে পারলেন না প্রদীপবাবুও। আর এরকম পরিবেশে তাক থেকে বই নামিয়ে পড়তে ইচ্ছে তো করবেই। প্রদীপবাবু বলছিলেন, ‘বই পড়ার আগ্রহ নাকি বাঙালির কমে যাচ্ছে। দেখি না এভাবে কিছু করা যায় কিনা!’ শুধু বই নয়, বইয়ের সঙ্গে হাতে তৈরি স্টেশনারি জিনিস রাখতেও আগ্রহী প্রদীপবাবু। বই পড়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কোনো জিনিস যদি কেউ প্রদর্শিত করতে চান, যোগাযোগ করতে পারেন তাঁর সঙ্গেই।

বই পড়ার সংস্কৃতি তো প্রায় হারিয়ে যেতেই বসেছে। তার মধ্যেও প্রদীপবাবুর মতো কেউ কেউ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাকে বাঁচিয়ে রাখতে। শুধু ঐতিহ্যের কথা বলে তো কিছু বাঁচিয়ে রাখা যায় না। প্রদীপবাবুর মতে, ‘সময়মতো সবকিছুকেই আধুনিক করে নিতে হয়।’ নিজে হাতে নিয়ে দেখে বই কেনার সুযোগ থাকলে পাঠক নিশ্চয়ই পড়বে। তখন হয়তো ঘরের পরিসর বাড়াতে হবে। এখন তিনি শুধু তাকিয়ে আছেন, তাঁর এই উদ্যোগ মানুষ পছন্দ করেন কিনা জানতে। কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করেই যদি বই পাঠকের আড্ডার নতুন ঠিকানা হয়ে ওঠে 'এক কাপ চা', তাহলে ক্ষতি কী?

More From Author See More