হোমো স্যাপিয়েন্স অর্থাৎ আধুনিক মানুষের আবির্ভাব ঘটেছিল আফ্রিকা মহাদেশে। তারপর ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ে ইউরোপ এবং সেখান থেকে এশিয়ায়। তবে তার পূর্বপুরুষ নিয়ানডার্থাল ততদিনে ইউরোপের বুকে বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। কয়েক হাজার বছর ধরে সংঘর্ষ চলার পর অবশেষে নিয়ানডার্থাল মানুষকে হারিয়ে হোমো স্যাপিয়েন্স তার প্রভাব বিস্তার করে। এই ইতিহাস মোটামুটি জানা থাকলেও তার সঠিক সময়কাল নির্ণয় করতে পারেননি ঐতিহাসিকরা। কারণ মাটির নিচে খুঁজে পাওয়া দেহাবশেষ দেখে তার প্রজাতি বোঝা অনেক সময়েই সম্ভব হয় না। তবে ইতিহাসের নানা রহস্যের উত্তর দিচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। এই প্রশ্নও তাই আর বেশিদিন অজানা থাকবে না।
সম্প্রতি বুলগেরিয়ার বাচু কিরো গুহায় পাওয়া গিয়েছে কয়েকটি মানুষের দেহাবশেষ। এখনও পর্যন্ত ইউরোপের মাটিতে এগুলিই হোমো স্যাপিয়েন্সের প্রাচীনতম নিদর্শন বলে স্বীকৃত। কিছুদিন আগে হলেও হয়তো এই হাড়গুলি হোমো স্যাপিয়েন্সের না নিয়ানডারথালের, সে-বিষয়ে সংশয় থাকত। কিন্তু বর্তমানে মাস স্পেকট্রোমেট্রি পদ্ধতির সাহায্যে নৃতাত্ত্বিকরা নিশ্চিত হয়েছেন যে এগুলি প্রাচীন প্রস্তরযুগের আধুনিক মানুষের হাড়। আর কার্বন ডেটিং পদ্ধতির সাহায্যে তাদের বয়স জানাও সম্ভব হয়েছে। দেখা গিয়েছে একেকটি হাড়ের বয়স ৪৩০০০ থেকে ৪৫০০০ বছর। কোনোটার বয়স আবার ৪৭০০০ বছরের আশেপাশে। ফলে তার মধ্যে যে ইউরোপের মাটিতে আধুনিক মানুষের পদসঞ্চার ঘটেছিল, সে-বিষয়ে আর সন্দেহের অবকাশ নেই।
বাচু কিরো গুহা বুলগেরিয়ার একটি অন্যতম প্রাচীন গুহা। ১৯৭০ সালে এই গুহায় খননকার্য চালিয়ে বেশ কিছু প্রাচীন হাড় সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে কোনো কারণে গবেষণার আগেই সেই নমুনাগুলি হারিয়ে যায়। এরপর ২০১৫ সালে সেখানে আবার খননকার্য চালান গবেষকরা। আর এবারে হাড়ের সঙ্গে পাওয়া যায় প্রাচীন প্রস্তরযুগের নানা অস্ত্রশস্ত্র এবং অলঙ্কার। পাথরের অস্ত্রের সঙ্গে আছে বেশ কিছু হাড়ের তৈরি অস্ত্রও। এবং অনেক গয়না আবার বিভিন্ন হিংস্র জন্তুর দেহাংশ থেকে তৈরি। এর থেকে প্রাচীন গুহামানবের শিকারি জীবনের সম্বন্ধে অনেক তথ্যই জানা গিয়েছে। তবে হাড়গুলি কোন প্রজাতির মানুষের, সে-বিষয়ে সংশয় ছিল। অবশেষে গবেষণায় সে-তথ্য জানা গেল, এবং এখনও পর্যন্ত ইউরোপের মাটিতে খুঁজে পাওয়া আধুনিক মানুষের প্রাচীনতম হাড় এগুলিই।