একদিকে প্রেসিডেন্ট বলসোনারো শুরু থেকেই বলে এসেছেন করোনা অতিমারী বলে আদৌ কিছু ঘটেইনি। সবটাই চক্রান্ত। তাই লকডাউনের প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। প্রয়োজন মনে করেননি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলারও। অথচ এর মধ্যেই বেড়ে চলেছে ব্রাজিলে মৃত্যুমিছিল। আমেরিকা ছাড়া পৃথিবীর সমস্ত দেশকে পিছনে ফেলে ব্রাজিলে করোনায় মৃতের সংখ্যা ৪ লক্ষ ছাড়িয়েছে। ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া শুরু হলেও তার গতি এতটাই কম যে মহামারী প্রতিরোধে তা প্রায় কোনো কাজে আসবে না বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
ইতিমধ্যে ব্রাজিলের করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য তৈরি হয়েছে বিশেষ পার্লামেন্টারি কমিটি। প্রথম তরঙ্গের সময় থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, সেই বিষয়ে ইতিমধ্যে রিপোর্ট তৈরি করে ফেলেছে কমিটি। এবার দ্বিতীয় তরঙ্গের পরিস্থিতি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে কমিটির রিপোর্ট জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট বলসোনারো শুধু করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলাতেই ব্যর্থ নন, একইসঙ্গে তিনি একজন গণহত্যাকারী। ব্রাজিলের অর্থনীতি রক্ষার অজুহাতে তিনি মানুষের প্রাণের গুরুত্ব ভুলে গিয়েছেন। এর জন্য তাঁর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছে কমিটি।
পরিসংখ্যান বলছে গত এক মাসে ব্রাজিলে দৈনিক করোনায় মৃতের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। এপ্রিলের শুরুতে সংখ্যাটা ৪ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তার কারণ অবশ্যই ভ্যাকসিনেশন প্রক্রিয়া। কিন্তু এখানেও প্রশাসনিক স্তরে গাফিলতির অভিযোগ তুলছেন চিকিৎসকরা। প্রথমত, প্রতিষেধক দেওয়ার বিষয়ে সরকার কোনোরকম উদ্যোগ নেয়নি। চিকিৎসকরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। তার পরেও প্রয়োজনীয় জোগান পাওয়া যাচ্ছে না। প্রেসিডেন্টকে সে-কথা বারবার জানানোর পরেও কোনো ফল হয়নি। এমনকি রাশিয়ার সাহায্যের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট বলসোনারো। এই বিষয়ে রাশিয়া সরকার তাঁর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
এখনও অব্দি ব্রাজিলের মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ পেয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন মাত্র ৬ শতাংশ মানুষ এবং তাও কেবলমাত্র সাও-পাওলো শহর ও তার আশেপাশের অঞ্চলে। আমাজনের প্রত্যন্ত এলাকায়, বিশেষ করে উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে প্রতিষেধক পৌঁছে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থাই করা হয়নি। অথচ সেখানেই ভ্যাকসিনের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি বলে প্রথম থেকেই জানিয়ে এসেছেন চিকিৎসকরা। এর মধ্যেই ব্রাজিলে ভ্যাকসিনের জোগান প্রায় শেষ। নতুন করে প্রতিষেধক আমদানির বিষয়েও সরকারের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না।
আরও পড়ুন
করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গে বিপর্যস্ত নেপাল, আত্মসমর্পণ সরকারের
অতিমারীর প্রথম তরঙ্গে লকডাউনের প্রয়োজন নেই বলেই মনে করেছিলেন প্রেসিডেন্ট। অবশেষে দেশজুড়ে সমালোচনার কারণে এপ্রিলের শুরুতে লকডাউনের প্রস্তাব মেনে নেন তিনি। যদিও ইতিমধ্যেই নিয়ম শিথিল করা হয়েছে অনেকটা। আদৌ কি দেশের মানুষের জীবনের কোনো মূল্য দিতে চান প্রেসিডেন্ট বলসোনারো? এই প্রশ্নই তুলছেন চিকিৎসকরা। অন্যদিকে পার্লামেন্টারি তদন্ত কমিটির উপরেও আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকে। তাঁদের মতে, বলসোনারোর মতো জেদি সামরিক শাসককে শাস্তি দেওয়া মোটেও সহজ নয়। তাই এই রিপোর্ট শেষ পর্যন্ত বাতিল কাগজেই পরিণত হবে। তবে পার্লামেন্ট যদি কোনোভাবে প্রতিষেধক আমদানির ব্যবস্থা করতে পারে, তাহলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া অনেকটাই সহজ হবে। আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে আছেন ব্রাজিলের মানুষ।
আরও পড়ুন
রেমডিসিভির মানেই করোনা-জয় নয়, জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
করোনার একাধিক স্ট্রেন সক্রিয় ভারতে, হার মানছে অ্যান্টিবডিও