Powered by Froala Editor
অবসাদ, মদ্যপান কিংবা দুর্ঘটনা – অকালে চলে গেছেন যেসব বলিউড তারকা
১/১১
২০২০ সালের জুলাই মাস। সারা দেশ তখন করোনা অতিমারীতে জর্জরিত। ঠিক এই সময় একটি খবরে চমকে উঠেছিলেন সকলে। মুম্বাইতে নিজ বাসভবনে আত্মহত্যা করেছেন বলিউডের তরুণ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। সুশান্তের আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তদন্তের মোড় ঘুরে যায় নানাদিকে। এরপর ঠিক ১ বছর পেরোতে না পেরোতেই আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারালেন ছোটোপর্দার শিল্পী সিদ্ধার্থ শুক্লা। পরপর এই দুই ঘটনায় উঠে আসছে নানা দিক। তবে বলিউডে প্রতিভাবান শিল্পীদের তরুণ বয়সে মৃত্যুর ঘটনা নতুন নয়। কারোর মৃত্যু হয়েছে শারীরিক অসুস্থতার কারণে। কেউ মারা গিয়েছেন দুর্ঘটনায়। আবার কারোর মৃত্যু আজও সমান রহস্যময়। এমনই কয়েকজন তারকার কথা রইল…
২/১১
বসন্তকুমার শিবশঙ্কর, ওরফে গুরু দত্ত। বলিউডের প্রথম যুগের সবচেয়ে উজ্জ্বল তারকাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। একাধারে পরিচালক, প্রযোজক আবার অভিনেতাও। তবে গুরু দত্ত এবং গীতা দত্তের দাম্পত্য জীবন সুখের ছিল না। ১৯৬৪ সালের ১০ অক্টোবর পোদ্দার রোডের বাড়িতে গুরু দত্তের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তে জানা যায় প্রচুর পরিমাণ মদ্যপান করেছিলেন তিনি। আর সেই মাদকের মধ্যে মেশানো ছিল ঘুমের ওষুধ। পুলিশ বিষয়টিকে আত্মহত্যা বলে মনে করলেও আজও অনেকের বিশ্বাস খুন করা হয়েছিল গুরু দত্তকে।
৩/১১
১৯৬৫ সালে গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী গীতা বালি। মাত্র ১২ বছর বয়সে শিশু শিল্পী হিসাবে পর্দায় আত্মপ্রকাশ গীতা বালির। ১৯৪৬ সালে ১৬ বছর বয়সেই ‘বদনামি’ ছবিতে প্রথম নায়িকা চরিত্রে অভিনয়। এরপর একের পর এক অন্তত ৭০টি সিনেমায় নিজের অভিনয় এবং সৌন্দর্যের রসায়নে মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। মাত্র ৩৫ বছর বয়সে গীতা বালির অকালপ্রয়াণ বলিউডের এক অপূরণীয় ক্ষতি।
৪/১১
১৯৪৭ সালে ‘নীল কমল’ ছবি দিয়ে পর্দায় আত্মপ্রকাশ ১৪ বছরের মধুবালার। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বলিউডের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাঁর অভিনয়ের পাশাপাশি ব্যক্তিত্ব এবং সৌন্দর্যের কাছে ম্লান হয়ে যেতেন সকলে। অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাতেও হাত লাগিয়েছিলেন মধুবালা। বলিউডের একাধিক অভিনেতাও তাঁর রূপে মুগ্ধ ছিলেন। তবে সেই তারকাকেও বিদায় নিতে হয় মাত্র ৩৩ বছর বয়সে। হৃদযন্ত্রের দীর্ঘ সমস্যায় থেমে যায় মধুবালার বর্ণময় জীবন।
৫/১১
বলিউডের ট্র্যাজিডি কুইন নামেই পরিচিত ছিলেন মীনা কুমারী। পর্দায় নায়িকার মনের দুঃখকে যেমন নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতেন, তেমনই নিজের ব্যক্তিগত জীবনের যন্ত্রণাকে আড়াল করে রাখতেন সবসময়। ছোটোবেলায় পারিবারিক অশান্তি যেমন সহ্য করতে হয়েছে, তেমনই দাম্পত্য জীবনও সুখের হয়নি মীনা কুমারীর। আর এইসব কারণেই হয়তো শেষ পর্যন্ত মদের কাছেই আত্মসমর্পণ করেছিলেন মীনা। অত্যাধিক মদ্যপানের কারণেই ১৯৭২ সালে মাত্র ৩৯ বছর বয়সে থেমে যায় ট্র্যাজিডি কুইনের কাহিনি।
৬/১১
জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেতা সঞ্জীব কুমার। নায়কের চরিত্রে খুব বেশি দেখা যায়নি তাঁকে। তবে বয়স নিরপেক্ষভাবে প্রতিটা চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন নিখুঁতভাবে। ভারতীয় সিনেমার জগতে অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্রাভিনেতাদের কথা বলতে গেলে সঞ্জীব কুমারের নাম থাকবে প্রথম সারিতেই। ১৯৮৫ সালে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মারা যান সঞ্জীব কুমার।
৭/১১
মাত্র এক দশকের অভিনয় জীবনে ২টি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন স্মিতা পাতিল। পেয়েছেন পদ্মশ্রী পুরস্কারও। একাধিক বাণিজ্যিক সিনেমার পাশাপাশি অন্য ধারার সিনেমাতেও নিজেকে মেলে ধরেছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে মাত্র ৩১ বছর বয়সে মৃত্যু হয় স্মিতা পাতিলের। প্রথম সন্তানের জন্ম দিতে গিয়েই প্রাণ হারান অভিনেত্রী।
৮/১১
গব্বর সিং বলতেই এখনও তাঁর মুখ মনে আসে সকলের। শুধুই গব্বর সিং নয়, আপাত খল চরিত্রকেও যে কতটা জনপ্রিয় করে তোলা যায় তা যেন শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন আমজাদ খান। ১৩০টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন আমজাদ। তাঁর অভিনয়ে মানুষ ভয় পেয়েছেন, রেগে উঠেছেন আবার হেসেও ফেলেছেন। তবে ১৯৮৫ সাল থেকেই শরীর ভেঙে যাচ্ছিল আমজাদের। ১৯৯২ সালে মাত্র ৫১ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তাঁর। ওষুধের ওভারডোজকেই আমজাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়।
৯/১১
১৯৯০ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে পর্দায় আত্মপ্রকাশ দিব্যা ভারতীর। পরবর্তী ২ বছরে ১২টির বেশি সিনেমায় অভিনয় করে রেকর্ড তৈরি করেছেন দিব্যা। অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চনের বিপরীতেও। ১৯৯৩ সালে মাত্র ১৯ বছর বয়সে তাঁর অ্যাপার্টমেন্টের ৫ তলার ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় দিব্যার। দিব্যা মৃত্যু রহস্যের সমাধান হয়নি আজও।
১০/১১
ভারতীয় চলচ্চিত্রে সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম শ্রীদেবী। প্রায় ৫ দশক ধরে দর্শককে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন তিনি। শ্রীদেবী যখন কর্মজীবনের মধ্যগগন থেকে একটু একটু করে সরে যেতে শুরু করেছেন, ঠিক তখনই আকস্মিক মৃত্যু হল তাঁর। ২০১৮ সালে দুবাইয়ের একটি হোটেলে পারিবারিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন শ্রীদেবী। সেখানেই হোটেলের বাথটবের জলে ডুবে মৃত্যু হয় শ্রীদেবীর। তবে তাঁর মৃত্যু নিছকই দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কিছু – তার উত্তর মেলেনি।
১১/১১
২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আরও এক মর্মস্পর্শী দুঃসংবাদের সাক্ষী থাকে বলিউড। অন্যতম প্রতিশ্রুতিবান শিল্পী ইরফান খান, দীর্ঘদিন ধরেই ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন তিনি। কিন্তু তার মধ্যেও অভিনয়ে ছেদ দেননি কখনও। তেমনই তাঁর মনের জোর অবাক করত সকলকে। কিন্তু ভাগ্যের কাছে সবাইকেই হেরে যেতে হয়। ইরফান খানকেও তাই ৫৩ বছর বয়সে ছেড়ে যেতে হল রুপালি জগত। এই ক্ষত সত্যিই পূরণ হওয়ার নয়।