ছিল না রুটি খাওয়ার টাকাও, আজ বলিউডের অন্যতম তারকা এই বাঙালি

/১২

বাঙালি হয়েও বলিউডে দাপিয়ে অভিনয় করা তারকাদের মধ্যে অন্যতম তিনি। রণিত বোস রায় (Ronit Bose Roy)। অবশ্য অধিকাংশ টেলি-দর্শকদের কাছে তাঁর পরিচয় কেডি পাঠক (KD Pathak) হিসাবেই। এই মুহূর্তে টেলিজগতের অন্যতম ‘দামি’ অভিনেতা তিনি। ধারাবাহিকের প্রতি পর্ব পিছু তাঁর মাইনে কমপক্ষে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা। তবে টেলিপর্দার ‘বিগ বি’-কেও একটা সময় লড়াই করতে হয়েছিল চরম অর্থকষ্টের সঙ্গে।

/১২

১৯৬৫ সাল। নাগপুরের একটি বাঙালি পরিবারে জন্ম রণিত বোস রায়ের। বাবার ব্যবসার কারণে তাঁর শৈশব কেটেছে গুজরাটের আহমেদাবাদেই। স্কুলের পাঠ শেষ করে রণিত পড়াশোনা করেন হোটেল ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। তবে মন পড়ে থাকত অভিনয়েই।

/১২

অভিনয়ের নেশাই মুম্বাইতে এনে হাজির করে রণিতকে। পরিচালক সুভাষ ঘাই বাবার বন্ধু হওয়ার সুবাদে, তাঁর বাড়িতে থেকে অভিনয়ের কাজ শেখার সুযোগও মেলে। কিন্তু মুম্বাইয়ের মতো শহরে টিকে থাকা তো মুখের কথা নয়। পেট চালাতে মুম্বাইয়ের সি রক হোটেলে ট্রেনি’র কাজ নেন রণিত। বাসন মাজা থেকে শুরু করে ওয়েটার— সমস্তরকমই কাজ করতে হয়েছে তাঁকে।

/১২

সিনেমারজগতে রণিতের আত্মপ্রকাশ ‘জান তেরে নাম’ চলচ্চিত্রের দৌলতে। পরের বছরই প্রকাশ পায় তাঁর দ্বিতীয় ছবি ‘বোম্ব ব্লাস্ট’। তবে দুটি সিনেমা বাণিজ্যিকভাবে সফলতা পেলেও, আর্থিক অনটন পিছু ছাড়েনি পর্দার কেডি পাঠকের। সেসময় প্রায় ৬ মাস এক টানা কোনো কাজই পাননি তিনি।

/১২

তারপর বাধ্য হয়েই বলিউড ছেড়েছিলেন রণিত। পরিবর্তে বাংলা, তামিল, তেলেগু ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। তবে পর পর সাতটি ছবি ফ্লপ করে। এই সময়টাকে নিজের জীবনের সবথেকে অন্ধকারতম সময় হিসাবেই চিহ্নিত করেন টেলিপর্দার ‘বিগ বি’। সে-সময় ডাল-রুটি খাওয়ারও টাকা ছিল না তাঁর। নির্ভর করতে হত বাড়ির ওপরেই। অনটনের জেরে বিবাহবিচ্ছেদরও সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে।

/১২

তবে আশা ছাড়েননি রণিত। বরং, ক্রমাগত চালিয়ে গেছেন মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর লড়াই। বড়ো পর্দা ছেড়ে বেছে নিয়েছিলেন ছোটো পর্দাকে।‘কামাল’, ‘কাসৌতি জিন্দেগি কে’, ‘কিউকি সাস ভি কভি বহু থি’-সহ বালাজি টেলিফিল্মের একাধিক সিরিজে তাঁর অভিনয় জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

/১২

তবে ২০১০ সালের ‘আদালত’ জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছে দেয় তাঁকে। সত্যান্বেষী আইনজীবী কেডি পাঠকের ভূমিকায় তাঁকে দেখা গিয়েছিল এই টেলি-সিরিজে। প্রাথমিকভাবে হিন্দি ভাষায় প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে দর্শকদের চাহিদা মেটাতে একাধিক ভাষায় অনূদিত হয় ‘আদালত’। প্রকাশ পায় একাধিক সিজন।

/১২

ওই একই বছর মুক্তি পায় তাঁর অভিনীত ছবি ‘উড়ান’। এই সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ সহকারী অভিনেতা হিসাবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও জিতে নেন রণিত। পরবর্তীতে ‘শুটআউট অ্যাট ওয়াদালা’, ‘আগলি’, ‘২ স্টেটস’, ‘গুদ্দু রঙ্গেলা’-এর মতো সিনেমাতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে চলচ্চিত্র মহলে।

/১২

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বর্তমানে টেলিভিশন, বড়োপর্দার বাইরে ওয়েব সিরিজেও নিজের অভিনয় দক্ষতা মেলে ধরেছেন রণিত। সেখানেও বাজিমাত করেছে তাঁর অভিনীত ‘হস্টেজ’, ‘৭ কদম’।

১০/১২

অভিনয় জীবনের বাইরে রণিত বোস রায় একজন সফল বাণিজ্যপতিও বটে। ২০১২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বেসরকারি প্রতিরক্ষা সংস্থা এস সিকিওরিটি অ্যান্ড প্রোটেকশন এজেন্সি। বর্তমানে অমিতাভ বচ্চন, আমির খান, শাহরুখ খান-সহ বলিউডের একাধিক খ্যাতনামা তারকাদের সুরক্ষা প্রদান করে তাঁর এই সংস্থাটি।

১১/১২

তবে সাফল্যের পাশাপাশি বিতর্কও পিছু ছাড়েনি তাঁর। ২০১২ সালে দিওয়ালি পার্টি থেকে ফেরার পথে একটি ধাক্কা মারে তাঁর মার্সিডিজ বেঞ্জ। আহত হন চার ব্যক্তি। সেদিন চালকের আসনে ছিলেন স্বয়ং রণিত। প্রাথমিকভাবে গ্রেপ্তার হতে হয় তাঁকে। রাশ ড্রাইভিং-এর জন্য গুনতে হয় জরিমানাও। তবে মেডিক্যাল পরীক্ষায় তাঁর শরীরে ড্রাগের অস্তিত্ব ধরা না পড়ায়, শেষ পর্যন্ত জামিনে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি।

১২/১২

ইতিমধ্যেই অপ্সরা অ্যাওয়ার্ড, বিগ টেলিভিশন অ্যাওয়ার্ড, ফিল্মফেয়ার, ইন্ডিয়ান টেলিভিশন অ্যাকাডেমি, ইন্ডিয়ান টেলি অ্যাওয়ার্ড-সহ একাধিক পুরস্কার ঢুকেছে রণিতের ঝুলিতে। তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না বাঙালি অভিনেতা। বরং, ভারতের বাইরেও নিজের অভিনয়-দক্ষতা মেলে ধরেই এখন তাঁর প্রধান লক্ষ্য। এর আগে বাংলাদেশের একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় এবং হলিউডের ‘ডাম্বো’ অ্যানিমেশন ফিল্মের ডাবিং-এ কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি। এখন হলিউডই তাঁর পাখির চোখ…

Powered by Froala Editor