নতুন আঙ্গিকে পুরনো প্রকাশনী, বইমেলায় তরুণদের প্রাধান্য দিচ্ছেন আজকালের সুকল্প চট্টোপাধ্যায়

যাঁদের স্টলে যাচ্ছেন, লাইন দিচ্ছেন, টেবিলে বই কিনে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন, কখনও মনে হইনি তাঁরা কারা? আপনার মতো দেখতে একটা মানুষ কেনই বা মেলায় ঘুরতে না এসে রোজ বসছে? কেন আপনি টেবিলের এপাশে আর তিনি ওপাশে? তাঁদের কিছু বিশেষ বলার আছে আপনাদের? মনে তো হওয়ারই কথা। তা-ই স্বাভাবিক। শুরু করা যাক সুকল্প চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, তিনি বইমেলার মুখ, মন থেকে ভালোবাসেন লিটল ম্যাগাজিনকে। সুকল্প আজকাল প্রকাশনার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক। তাঁদের এই নতুন দল দায়িত্বে এসে বদলে দিয়েছে আজকাল-এর সেই পুরোনো কাজের ধরণ। আজকাল এখন কবিতার বইয়ে জোর দিচ্ছে। গদ্য-উপন্যাস-গল্প তো রয়েইছে। তার চেয়েও বড় কথা, নতুনদের বই করছে আজকাল। তরুণদের। প্রতিষ্ঠিত লেখকদের বইয়ের পাশাপাশি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে প্রচারও করছেন সেসব বইয়ের। প্রচার বলতে কেবল সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন নয়। নতুন নতুন পন্থা ভাবছেন তাঁরা। পোর্টালের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে শুট করা হচ্ছে ভিডিও। সব মিলিয়ে নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার এক অদম্য ইচ্ছা দেখাচ্ছেন তাঁরা। তাহলে কি তরুণরাই প্রকাশনার ভবিষ্যৎ? কোন মাধ্যমে এগোচ্ছে বইয়ের প্রচার?

আমরা জিজ্ঞাসা করি এতদিনের প্রকাশনা আজকাল-এর ইতিহাসে কোনওদিনই কোনও তরুণের বই হয়নি এর আগে। সেই প্রথা ভাঙা হল। এর কি কোনও বিশেষ যুক্তি বা চিন্তা রয়েছে আজকালের কাছে?

সুকল্প জানান আজকাল প্রকাশনী যেসব তরুণদের বই প্রকাশে এগিয়ে আসছে, তাঁরা কেউই প্রতিষ্ঠানের ভাষায় লেখেন না। এইসমস্ত লেখকদের বই প্রকাশ করে তাঁরা পাঠক-ক্রেতাদের এমনকি বড়-মেজো-সেজো প্রকাশনী সংস্থাগুলিকেও এই বার্তা দিতে চান যে, অপ্রাতিষ্ঠানিক এইসমস্ত লেখকদের একটা নিজস্ব বাজার রয়েছে। তাছাড়া, তরুণদের বই প্রকাশ না করলে, তরুণ লেখকদের উৎসাহ না দিলে কোনও প্রকাশনী বেঁচে থাকতে পারে না বলে মনে করেন তাঁরা। জিওল মাছের মতো জীয়ন্ত থাকতে গেলে যেকোনও প্রকাশনা সংস্থাকে তরুণ লেখকদের বই প্রকাশে এগিয়ে আসতেই হবে। নাহলে কয়েকশো বছরের পুরনো বইয়ের উপর দাঁড়িয়ে প্রকাশনার কাজ চলতে পারে না।

মজার বিষয় পুরোদমে একটি ছাপা বইয়ের প্রকাশনা অনলাইন প্ল্যাটফর্মকে ভালোভাবে কাজে লাগাচ্ছে, এমন খুব একটা দেখা যায় না। আজকাল ভিডিও প্রমোশন করছে, লেখকদের সঙ্গে আড্ডায় সাক্ষাৎকার নিচ্ছে, এগুলো ভাবতে হচ্ছে কেন? আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্যই কি?

উত্তরে সুকল্প বলেন বইয়ের প্রচারের ক্ষেত্রেও ছক ভেঙেছেন তাঁরা। আজকাল ডট ইন এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে 'বই-তরণী' নামক একটি অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। সেখানে শুধু আজকালের প্রকাশনা নয়, অন্য প্রকাশকদের ভালো বই এবং লেখকদের নিয়েও আড্ডা চলে। ভালো বই আমরা পড়বো এবং ভালো বই আমরা পড়াবো, এই তাঁদের উদ্দেশ্য। আর তার জন্য যত বেশি সংখ্যায় পাঠকের কাছে পৌঁছনো যায়, তত ভালো। একটা বড় হল ভাড়া করে বই প্রকাশের অনুষ্ঠান করলে, কেবলমাত্র হলের আসনসংখ্যা যত, সেই কয়েকজন পাঠকের কাছে পৌঁছনো যায়। কিন্তু ভিডিও প্রচারের মাধ্যমে ২০ হাজার, ২৫ হাজার; কখনও বা ৪০ হাজার পাঠকের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়। এই কারণেই সম্পূর্ণ অন্য একটি মাধ্যমকে প্রচারে কাজে লাগাচ্ছেন তাঁরা।

সুকল্প তরুণদের নিয়ে যথেষ্ট আশাবাদী, আশাবাদী বইমেলার এবারের বিক্রি নিয়েও। পাঠক ভালো বই খুঁজে নেবেন ঠিক, মানুষকে বিশ্বাস করাতে চান এই বেদবাক্য।