তরুণরা নাম দিয়েছে ‘মুদ্রণাচার্য’, ছোটো পত্রিকার নিখুঁত মুদ্রণই লক্ষ্য বোধশব্দের সুস্নাত-র

গত রবিবার কলকাতা বইমেলায় পা ফেলেছেন প্রায় দু’লক্ষ মানুষ। কেবলই বইয়ের জন্য? হয়তো বা! কিংবা দেখা সাক্ষাৎ। হতে পারে নিছক, এতবড় এক যজ্ঞের সাক্ষী হতে। তা সে যে কারণেই হোক, বইমেলা আমাদের কাছে এক অন্য আবেগ, এক অন্য অনুভূতি। কোনও তুলনা নেই যার। আর এই গলির পর গলি, তার দুপাশে দোকানঘর, খুঁজে না পাওয়া, হাতে ম্যাপ দেখতে দেখতে হোঁচট খাওয়ার মাঝে লুকিয়ে রয়েছে সম্পূর্ণ আলাদা কিছু গল্প। এতদিন কেবল পাঠক ও ক্রেতারা প্রাধান্য পেয়েছেন। তাঁদের নানা প্রশ্ন করে যানা হয়েছে উত্তর, বইমেলা সম্পর্কে অভিজ্ঞতা। কিন্তু বাকিরা? এতবড় এক জমায়েতে কোনও বিশেষ গল্প বলার নেই, তাও কি হয়? প্রহর বেরিয়ে পড়ল সেই অদ্ভুত গল্পগুলির খোঁজে। বইমেলার আড়ালে এই আরেক বইমেলার গল্প আমরা তুলে ধরব পাঠকের কাছে।

বিগত দুই দশক ধরে বোধশব্দ পত্রিকার সম্পাদনা করে আসছেন সুস্নাত চৌধুরী। বইমেলার এক রঙিন মুখ তিনি। পত্রিকার কনটেন্টের পাশাপাশি তার প্রেজেন্টেশনেও সমান গুরুত্ব দিয়ে এসেছে 'বোধশব্দ'। সুস্নাতবাবুর, মতে একজন সম্পাদকের কাজ শুধু কনটেন্টের খোঁজখবর রাখা নয়, একই সঙ্গে মুদ্রণের বিষয়েও ন্যূনতম ধারণা থাকা উচিত সম্পাদকের। সম্প্রতি এই বিষয়ে একটি কর্মশালার আয়োজক ছিলেন তিনি। যেখানে পত্রিকার মুদ্রণ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়। সুস্নাতবাবু মনে করেন, প্রচ্ছদও পত্রিকার কনটেন্টের অংশ। তাঁর এই কথা এবং পিছনের যুক্তি বেশ স্পষ্ট, আসুন জেনে নিই তাঁরই ভাষ্যে -

“প্রত্যেক সম্পাদকের মাথায় থাকা উচিত, তিনি যা বানাচ্ছেন তা একটি কমপ্লিট প্রোডাক্ট। পত্রিকা অথবা বই। তিনি জেরক্স করে হাতে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন না। যেহেতু এই বস্তু তিনি বানাচ্ছেন, তার প্রকরণের দিকটা অবশ্যই খানিকটা জেনে রাখা উচিত।

বড়ো প্রকাশনার বিভিন্ন কাজের জন্য রয়েছেন পেইড স্টাফ। কিন্তু লিটল ম্যাগাজিনের ক্ষেত্রে সম্পাদক বা দু-তিনজনকেই সামলে নিতে হয় সমস্তটা। তাই মুদ্রণের ব্যাপারে কিছুটা জ্ঞান থাকা আবশ্যক। একই সঙ্গে থাকা উচিত খানিকটা অ্যাস্থেটিক সেন্স। আর তা বাড়ে চর্চায়। নিয়মিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, বই, এবং সারা পৃথিবীতে কী ধরনের কাজ হচ্ছে, সেসবের খোঁজখবর রাখা প্রয়োজন। ভালো প্রেজেন্টেশন মানেই যে সবসময় প্রচুর খরচ, তা নয়। একটু ভাবনাচিন্তা করলেই কম খরচেও সুন্দর প্রোডাকশন তৈরি করা যায়।

'বোধশব্দ'-য় যে অর্ধেক প্রচ্ছদ দেওয়া হয়, সেও শুরু হয়েছিল খরচ কমানোর জন্যই। এখন সেটাই পত্রিকার পরিচয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন চাইলেও আর সম্পূর্ণ প্রচ্ছদ দেওয়া সম্ভব নয়। আসলে একটা বই তৈরির সময় ভাবা দরকার, পাঠক কীভাবে তা পড়বেন। সেই অনুযায়ী তার আয়তন, প্রত্যেক লাইনের লিড, গ্যাপ সমস্ত ঠিক করতে হবে। নাহলে অনেক সময়েই খুব ভালো কন্টেন্ট, কিন্তু খারাপ প্রোডাকশনের জন্য পড়তে ইচ্ছে করে না। তাই যে-কোনো পত্রিকায় কনটেন্টের দিকে তো নজর দিতেই হবে, একইসঙ্গে গুরুত্ব দিতে হবে প্রেজেন্টেশনেও। বোধশব্দ চেষ্টা করছে তরুণ সম্পাদকদের এবিষয়ে সচেতন করার।”

মুদ্রণ বিষয়ক কর্মশালার আয়োজনেরও কারণ সেটাই। একদিনে হয়তো বিরাট কিছু বদলে যাবে না, তবু সুস্নাতবাবু মনে করেন ভালো কাজ দেখলে রুচি জাগবেই মানুষের। তরুণ প্রজন্মের অনেকেরই ক্রমশ এদিকে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। এটা একটা আশার বিষয়।