কিংবদন্তিদের স্মরণীয় স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখতে চান অনেকেই। যেমন, তাঁদের ডাইরি। অথবা ডাইরির একটি পাতাও হতে পারে। লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে এইসব স্মৃতি সংরক্ষণ করেন অনেকেই। দাম কত হতে পারে? একটা উদাহরণ দিলেই বোঝা যাবে। সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে গায়ক-গীতিকার বব ডিলানের ডাইরির একটি পাতা। আর তার দাম ধার্য করা হয়েছে ২২ লক্ষ ডলার। অবাক করা হলেও, এটাই তাঁর ডাইরির একটি পাতার বিক্রয়মূল্য।
কী আছে এই একটি পাতায়? আছে তরুণ ডিলানের এক অনবদ্য সৃষ্টি। 'দ্য টাইমস দে আর আ-চেঞ্জিং' গানটির লিরিক লিপিবদ্ধ এই পাতায়। ১৯৬৩ সালে ২২ বছরের ডিলান যে রক মিউজিকের জগতে এক ইতিহাস গড়ে দিয়েছিলেন এই গানে। সময়টাও এক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ষাটের দশকে, সারা পৃথিবীজুড়ে তখন এক অস্থিরতা বাসা বেঁধেছে তরুণ ও যুবকদের মনের মধ্যে। কেনেডির মৃত্যু থেকে সোভিয়েতে ভাঙন, ইতিহাস সাক্ষী থাকছে এক বাঁক বদলের। দিকে দিকে গড়ে উঠছে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ। আর সেই সময়টাকেই একটি গানের মধ্যে ধরতে চেয়েছিলেন নবাগত ডিলান। তারপর এই গান যে কত মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে, তার কোনো হিসাব নেই। ষাটের দশকের প্রতিবাদের গানগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত 'দ্য টাইমস দে আর আ-চেঞ্জিং'।
রক মিউজিক তো বটেই, সারা পৃথিবীর সংস্কৃতি জগতের চলমান ইতিহাসকে এক ধাক্কায় বদলে দিয়েছিলেন বব ডিলান। তিনিই পৃথিবীর একমাত্র নোবেলজয়ী গীতিকার। আর তাঁর নিজের হাতে লেখা গানের পাতায় কথার সঙ্গে মিশে থাকা আঁকিবুঁকি, অস্থিরতা সবটুকু সংগ্রহ করে রাখতে যে অনেকেই আগ্রহী হবেন, তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে? কয়েক বছর আগে তাঁর 'লাইক এ রোলিং স্টোন' গানটির লিরিক নিলামে বিক্রি হয়। সেবার দাম উঠেছিল ২০ লক্ষ ডলার। এবার অবশ্য নিলামের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে না। লস অ্যাঞ্জেলেসের অটোগ্রাফ ডিলার গ্যারি জিমেটের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে এই লিরিকটি কিনতে পারবেন আগ্রহীরা। যিনি প্রথম আবেদন করবেন, তিনিই পাবেন স্বত্ত্বাধিকার। একইসঙ্গে গ্যারি জিমেট ডিলানের আরও দুটি গানের লিরিক বিক্রি করবেন বলে জানিয়েছেন। এই দুটি হল, 'সাবটেরানিয়ান হোমসিক ব্লুজ' এবং 'লে লেডি লে'। এই লিরিকদুটির মূল্য যথাক্রমে ১২ লক্ষ ডলার এবং ৬৫০০০০ ডলার।
বিশ্বের বহু গীতিকারের ডায়েরির পাতা এমনই লক্ষ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। শুধুই তো গানের কথা নয়, সেইসঙ্গে গীতিকারের কাটাকুটি, আঁকিবুঁকি সবই যে থাকে সেই পাতায়। আর বব ডিলানের মতো গীতিকারের লেখার দাম যে অন্য অনেকের থেকে অনেক বেশি। ৭৮ বছর বয়সে এসেও তো চিরতরুণ তিনি। কোনো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তো বাঁধা যায় না তাঁকে। তাঁর গানের আবেদনও তো তাই সর্বকালের। তাঁর মৃত্যুর পর পৃথিবীর নানা প্রান্তের মানুষের কাছে এই সংগ্রহগুলোই স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে। আর অবশ্যই থেকে যাবে তাঁর প্রতিটি গান।