শিবরাম আর ‘হর্ষবর্ধন-গোবর্ধন’-এর সঙ্গে তো সবাই পরিচিত। দুই ভাইয়ের কাণ্ডকারখানা যুগ যুগ ধরে বাঙালিকে হাসিয়েছে। সেরকমই একটি গল্পে হর্ষবর্ধন আর গোবর্ধনকে এক জম্পেশ ‘বুদ্ধি’ দিয়েছিলেন এক খুড়ো। রাস্তায় কোনো ষাঁড়ের খপ্পরে পড়লে বাঁচার সহজ উপায়, হাত দুটোকে শিংয়ের মতো কানের দুইপাশে নিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। অর্থাৎ, একভাবে বলতে গেলে নিজেই ‘ষাঁড়’ বা ‘গরু’ হয়ে যাওয়া যাকে বলে আর কি! কিন্তু ঘটনাচক্রে সেই জিনিসটিই করতে গিয়ে বিপদে পড়ে যান হর্ষবর্ধন! ‘গরু’ হওয়া কি চাট্টিখানি কথা…
এই চারপেয়েদের নিয়ে আলোচনা কেন? কারণ একটি বিশেষ অবস্থায় পড়লে মানুষ এদের মতো আচরণ করে। এই বিশেষ ‘রোগ’টিকে বলা হয় বোয়ানথ্রপি। নামটি বেশ ভারিক্কি; রোগটিও। এই রোগে আক্রান্ত মানুষ নিজেকে গরু বা ষাঁড় মনে করে! খুবই জটিল এই মানসিক ব্যাধিটি নানা কারণে হতে পারে। অনেক সময় বিশেষ কোনো স্বপ্নের মধ্যে ঘটতে পারে। যার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে মানুষ নিজেকে সত্যিকারের গরু মনে করে। অনেকক্ষেত্রে এটা সাময়িক হলেও, বেশ কিছু ক্ষেত্রে জটিল পর্যায়ে চলে যায়। এমনকি, এই সময় এসেও বেশ কিছু জায়গায় এই রোগের অস্তিত্ব দেখা যায়। মানুষ মাঠে নেমে রীতিমতো ঘাসও চিবোয়!
ইতিহাসের পাতা খুললেও বোয়ানথ্রপির বেশ কিছু উদাহরণ পাওয়া যাবে। তার মধ্যে সবথেকে বিখ্যাত উদাহরণটি বোধহয় ব্যাবিলনের বিখ্যাত সম্রাট দ্বিতীয় নেবুচ্যাডনেজার। নিও-ব্যাবিলোনিয়ান সাম্রাজ্যের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী সম্রাট যিনি, তিনিও মাঝে মাঝে নিজেকে ষাঁড় মনে করতেন! তারপর মাঠে নেমে ঘাস খেতে শুরু করতেন! পারস্য সাম্রাজ্যের বুয়িদ বংশের আরেক সম্রাট মাজিদ আল-দাওলাও একই রোগে ভুগতেন। এককালে পড়া না পারলে আমরা কতই না ‘গরু’ বলে বকা খেয়েছি। সেইসময় যদি সত্যি সত্যিই নিজেকে গরু ভাবতে শুরু করত সবাই, তাহলে আর নিস্তার ছিল না…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
তিন বাঙালির যুগান্তকারী গবেষণা, উঠে এল বিরল মানসিক রোগের রহস্য