একদিকে কপ-২৬ সম্মেলনে কার্বন নিঃসরণ মোকাবিলা নিয়ে চলছে পরিকল্পনা। অন্যদিকে বাতাসের কার্বন শোষণের নতুন পথ খুঁজে পেলেন বিজ্ঞানীরা। শুধুই অরণ্য নয়, কার্বন শোষণের আরও কার্যকর ক্ষমতা লুকিয়ে আছে সমুদ্রের মধ্যে। এমনটাই জানাচ্ছে গবেষণা। আর সেই ‘ব্লু কার্বন সিঙ্ক’-কে (Blue Carbon Sink) কাজে লাগিয়েই জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারে মানব সভ্যতা। পরীক্ষামূলকভাবে সাফল্যও পাওয়া গিয়েছে ইতিমধ্যে। গ্রিন হাউস গ্যাস প্রতিরোধে ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদের কার্যকারিতার কথা সকলেরই জানা। কিন্তু সমুদ্রের উদ্ভিদ মানে শুধু তো ম্যানগ্রোভ নয়, রয়েছে লবণাক্ত জলাভূমিতে জন্মানো নানা গাছ এবং সামুদ্রিক ঘাস ও শৈবাল। এই সমস্ত উদ্ভিদের ক্ষমতা সম্পর্কে এতদিন প্রায় কোনো ধারণাই ছিল না বিজ্ঞানীদের। তাই সাম্প্রতিক গবেষণায় রীতিমতো অবাক সকলেই।
৭ বছর আগে সমরসেটের স্টিয়ার্ট পেনিনসুলায় কৃত্রিম প্লাবনভূমি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০১৪ সালে সেই প্রকল্প সম্পূর্ণও হয়। তবে প্রকল্পের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে কাউকেই কিছু জানায়নি উদ্যোগী দুই সংস্থা এনভারনমেন্ট এজেন্সি এবং ওয়াইল্ডফাউল অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ডস ট্রাস্ট। বলা হয়েছিল ম্যানগ্রোভ অরণ্য তৈরি করে ভূমিক্ষয় রোধ করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। তখন ইংল্যান্ডের বিভিন্ন অংশ থেকে ধেয়ে এসেছিল সমালোচনার ঝড়। এমনকি সমরসেটের জনপ্রতিনিধিরাও অনেকে বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু সেই সবকিছুকেই উপেক্ষা করে শুরু হয় গবেষণা। ম্যানগ্রোভ অরণ্যের ছায়ায় তৈরি হয় বিস্তীর্ণ লবণাক্ত জলাভূমি। এমনকি সামুদ্রিক ঘাস ও শৈবালের বাস্তুতন্ত্রও গড়ে তোলা হয়।
সম্প্রতি ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটির গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এক হেক্টর সমুদ্র প্রতি বছর ১৯ টন পর্যন্ত কার্বন শোষণ করতে পারে। সমপরিমাণ বৃষ্টি অরণ্য ১০০ বছর ধরে যে পরিমাণ কার্বন শোষণ করতে পারে, সামুদ্রিক উদ্ভিদের তা করতে সময় লাগে মাত্র ৬ বছর। ২০০৯ সাল থেকেই ব্লু কার্বন সিঙ্ক নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। তবে তার কার্যকারিতা যে এতটা হতে পারে, সেটা আশা করেননি কেউই। পূর্ববর্তী নানা গবেষণায় দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সাহায্যেই বিশ্বের বার্ষিক কার্বন নিঃসরণের ৫ শতাংশ শোষণ করা সম্ভব। এর সঙ্গে লবণাক্ত জলাভূমি এবং সামুদ্রিক শৈবালের বাস্তুতন্ত্রকে যুক্ত করতে পারলে সমস্যার আরও দ্রুত সমাধান হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের চূড়ান্ত সময়ে নতুন করে আশার আলো দেখাচ্ছে এই গবেষণা।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকোপে নিঃস্ব অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলা