উপসর্গ নয়, রক্তপরীক্ষাই এবার ধরিয়ে দেবে ‘রহস্যময়’ কালাচের বিষ

কেউটে, গোখরো, চন্দ্রবোড়া এবং কালাচ। ভারতে সর্পদংশনে মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনাই ঘটে মূলত এই চার সর্পপ্রজাতির কারণে। তবে এই ‘বিগ ফোর’-এর মধ্যে সবথেকে রহস্যময় সাপ হল কালাচ বা কমন ক্রেইট। বিষধর এই সাপটি মূলত কামড়ায় বিছানায় উঠে। আশ্চর্যের বিষয় হল, কালাচের কামড়ে কেউটে বা গোখরোর দংশনের মতো জ্বালা-যন্ত্রণাও হয় না রোগীর। ফলত, উপসর্গ দেখে না বুঝতে পারলে, অজান্তেই বিষক্রিয়া চলতে থাকে রোগীর শরীরে। যার ফলাফল হতে পারে মৃত্যু পর্যন্ত। এবার এই রহস্যময় সমস্যারই সমাধান দিলেন একদল ভারতীয় বিজ্ঞানী। সাপে কাটা ব্যক্তির সামান্য রক্তের নমুনা থেকেই এবার চিহ্নিত করা যাবে কালাচের বিষ। যা আগামীদিনে বিপ্লব আনতে চলেছে সর্পদংশনের চিকিৎসায়।

“মূলত সেলেক্স প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃত্রিম সিঙ্গেলস্ট্রেন ডিএনএ-র সাহায্যে এই চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়াটি করা হচ্ছে। এই প্রক্রিয়া এমন একটা টক্সিনকে shনাক্ত করা হয়, যেটা কালাচ ছাড়া অন্যান্য বিষধর সাপের বিষে নেই। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তের সিরামের এক ফোঁটা নমুনা সংগ্রহ করে বিশেষ ডিভাইসের মাধ্যমে খুব দ্রুত এই টক্সিনটিকে চিহ্নিত করতে পেরেছি আমরা।”

বলছিলেন গবেষক বিশাল সাঁতরা। বছর দুয়েক আগে থেকেই শুরু হয়েছিল এই গবেষণা। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল কালাচের বিষ। মূল চ্যালেঞ্জ ছিল কালাচের বিষের ‘অভিনবত্ব’ বা নভেল টক্সিনটিকে পৃথক করা। সেই অসাধ্যসাধনই করে দেখিয়েছেন ভারতীয় গবেষকরা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কোনো দামি সরঞ্জাম নয়, বরং স্বল্প মূল্যের নাইট্রোসেলুলোজ পেপার স্ট্রিপের মাধ্যমেই shনাক্ত করা সম্ভব কালাচের বিষ। পদ্ধতিটি সাশ্রয়ী হওয়ায়, তা বিশেষভাবে উপযোগী ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশে। সম্প্রতি গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির বিজ্ঞানপত্রিকা ‘বায়োসেনসরস অ্যান্ড বায়ো ইলেকট্রনিক্স’ জার্নালে।

তবে সর্পদংশন থেকে সাপের প্রজাতি নির্ণয়ের গবেষণা এই প্রথম নয়। এই প্রচেষ্টা প্রথম হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াতে। ওখানে এলাইজার টেস্টের মাধ্যমে কী সাপ কামড়েছে সেটা নির্ধারণের জন্য বিশেষ একটি কিট প্রস্তুত করেছিল। সেখানে নমুনা হিসাবে ব্যবহার করা হত ক্ষতস্থানে লেগে থাকে সাপের লালা। তবে খুব একটা সাফল্য পায়নি সেই কিট। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভারতীয় গবেষকদের কালাচের বিষ চিহ্নিতকরণের পদ্ধতি অনেকটাই আধুনিক। পাশাপাশি কালাচের মতো সাপের নিউরোটক্সিক বিষ চিহ্নিত করা সম্ভব হওয়ায়, দ্রুত শুরুও করা যাবে চিকিৎসা। সাম্প্রতিক এই আবিষ্কারের দৌলতে আগামীদিনে সর্পদংশনে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে দেবে বলে আশাবাদী গবেষকরা। 

আরও পড়ুন
‘সাপ আমাদের শত্রু নয়’, মানুষের হাত থেকে সাপেদের বাঁচাতে লড়াই যুবকের

তবে এখানেই থেমে থাকছে না গবেষণার কাজ। আপাতত নতুন এই কিটের মাধ্যমে দু’ ঘণ্টার মধ্যেই চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে কালাচের বিষ। এই সময়সীমাটিকে ২ মিনিটে নামিয়ে আনাই লক্ষ্য ভারতীয় গবেষকদের। সেই মতো বেশ কিছু বদলের চেষ্টাও চলছে বর্তমান প্রযুক্তিতে। পাশাপাশি ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে কিছুদিনের মধ্যেই। 

আরও পড়ুন
দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে সাপের সঙ্গে ‘ঘর’ করছেন বৌদ্ধ ভিক্ষু!

কিন্তু শুধু কালাচের বিষ শনাক্তকরণেই মিটবে না সর্পদংশনের সমাধান। বিশাল সাঁতরা জানালেন, “ভারতে শুধু তো কালাচের কামড়েই মৃত্যু হয় না। সেইসঙ্গে একাধিক প্রজাতির সাপের কামড়ে মৃত্যু হয় মানুষের। সেই বিষগুলিকেও পৃথকভাবে চিহ্নিতকরণের চেষ্টা চলছে।” তবে জটিল আইনি প্রক্রিয়ার কারণে, সর্পাঘাতের গবেষণা দ্রুত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বনদপ্তরের অনুমতি পেতে গেলে যে বেশ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বিজ্ঞানীদের, সেই কথাই ফুটে উঠল তাঁর বক্তব্যে। তবে হাল ছাড়তে নারাজ ভারতীয় গবেষকরা…

আরও পড়ুন
১২৯ বছর পর আসামে ফিরল বিশেষ প্রজাতির সাপ, উৎসাহিত বিজ্ঞানীরা

Powered by Froala Editor

Latest News See More