দেখতে পান না চোখে, অদম্য ইচ্ছের জোরে মাস্টার্সে ভর্তি হলেন সাবিনা বানু

হেরে গিয়েও জিতে যায় কেউ কেউ। বহুরকম প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও যারা জীবনের কাছে জিতে যায়, তারাই শ্রেষ্ঠ জাদুকর। তাদের জাদুতে আমরা মুগ্ধ হই, অবাক হয়ে দেখি তাদের বেঁচে থাকার লড়াই। এমনই এক লড়াইয়ের নাম হল সাবিনা বানু।

দৃষ্টিশক্তিহীন হলেও জীবনের কাছে হেরে যাননি সাবিনা। পরিবারের অর্থ কষ্ট দূর করতে এবং প্রতিবন্ধীদের সাহায্যের জন্য বদ্ধপরিকর এই বছর ছাব্বিশের তরুণী জলপাইগুড়ির আনন্দ চন্দ্র কলেজ অফ কমার্সে ইতিহাসে মাস্টার ডিগ্রিতে ভর্তি হন।

একশো শতাংশ দৃষ্টিশক্তিহীন সাবিনা বানুর বাস মাল ব্লকের রাজাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ হাঁসখালি এলাকায়। তবুও তিনি উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে চান। আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া পরিবারের একটি মেয়ের জীবনের অদম্য জেদকে সম্মান জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ অধ্যক্ষ সিদ্ধার্থ সরকার জানিয়েছেন যে, সাবিনার পড়াশোনার যাবতীয় খরচপাতির দায়িত্ব কলেজের। তাঁকে সর্বতোভাবে সাহায্য করবেন বলে জানিয়েছেন কলেজের অনান্য শিক্ষকগণ।

দেড় বছর বয়সে বাবা-কে হারান সাবিনা। আড়াই বছরে টাইফয়েডের ফলে নিজে অন্ধ হয়ে যান। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ব্রেইলের মাধ্যমে পড়াশোনা করেন সাবিনা। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং স্নাতক স্তরে তাঁকে লেখক রাখতে হয়েছিল। সাবিনা শুনে শুনে পড়া মনে রাখতে পারেন। সাবিনা এদিন জানান যে, বিডিও অফিস থেকে জি আর এ চাল, মানবিক প্রকল্পের ভাতার টাকা এবং দাদাদের দেওয়া টাকায় টেনেটুনে তাঁদের সংসার চলে।

দেখতে পান না বলে তাঁর শিক্ষকরা বিভিন্ন পড়া রেকর্ড করে রাখতেন। সাবিনা সে-সমস্ত রেকর্ডিং শুনেই মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং স্নাতক স্তরে পরীক্ষা পাশ করেন। কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যক্ষ সুব্রত দাস জানান যে, সাবিনাকে সমস্ত রকম সাহায্য প্রদান করা হবে। সিলেবাসের সমস্ত বই ইতিমধ্যেই তাঁকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি লাইব্রেরিতে বসিয়ে পড়া বোঝানো, রেকর্ডিংয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বাড়ির আশপাশের ছাত্রছাত্রীদেরও সাবিনাকে সাহায্য করতে বলা হয়েছে।

সাবিনার মতো মেয়েরাই সমাজের ভরসা, আশার আলো। তাঁর স্বপ্ন সফল হোক, এমন ইচ্ছে আমাদের সবারই। এই অদম্য প্রয়াসের পাশাপাশি তাঁর কলেজের শিক্ষকদের পাশে থাকাকেও সমাজের কুর্নিশ জানানো উচিৎ। মানুষের পাশে মানুষ দাঁড়ালে গোটা পৃথিবী এভাবেই সহজ ও সুন্দর হয়ে উঠবে।