‘ডুব দে রে মন কালী বলে’। তবে কালীর জন্য নয়, মাছ ধরার জন্যই পুকুরে, নদীতে ডুব লাগান নবীন মালাকার। না, কোনও ছিপ বা জাল নয়। স্রেফ ডুব লাগিয়েই বুঝে যান মাছের গতিপ্রকৃতি। ব্যস, তারপর অবস্থা বুঝে মাছ ধরা সম্পন্ন করেন নবীনবাবু। ছোট থেকেই যার চোখে আলো পড়েনি। হ্যাঁ, নবীন মালাকার একজন দৃষ্টিহীন মৎস্যজীবী।
তবে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনই ছাপ ফেলতে পারেনি কাজে। কারণ, জলপাইগুড়ির গড়ালবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা নবীন মালাকারের একটি বিশেষ ক্ষমতা আছে। অন্যান্যদের মতো ছিপ ফেলে বা জাল দিয়ে মাছ ধরতে পারেন না তিনি। বরং সরাসরি মাঠে, থুড়ি জলে নেমে পড়াই তাঁর পছন্দ। একবার জলে নামলেই, সমস্তটা নখদর্পণে চলে আসে তাঁর। জলের কোন জায়গায় মাছ রয়েছে, তার গতিবিধি কীরকম, কতটা গভীরে রয়েছে সেটি, সমস্ত কিছু বুঝে নেন তিনি। তারপর ডুব দিয়ে সেখান থেকে মাছ তুলে আনেন। বহু বছর ধরে এই পদ্ধতিতে মাছ ধরে আসছেন তিনি। শুধু পুকুরে নয়, নদীতেও ডুবসাঁতারে মাছ ধরেন। এই অদ্ভুত ক্ষমতার জন্য সকলেই কুর্নিশ করেন নবীনবাবুকে।
শুধু মাছ ধরার অদ্ভুত শৈলী নয়, একবার আঙুল বুলিয়ে টাকার নোটের অঙ্কও নির্ভুলভাবে বলে দিতে পারেন দৃষ্টিহীন নবীনবাবু। এত গুণ যার, তাঁর সংসার চলে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে। মাছ বেচে যা সামান্য আয় হয়, তাতেই কোনমতে চলে যায় তাঁর এবং তাঁর স্ত্রীর। দুই ছেলে থাকলেও, কেউ খেয়াল রাখে না। কিন্তু এই অবস্থার জন্য কোনও আফসোস নেই নবীনবাবুর। যেভাবে ভগবান পাঠিয়েছেন, সেভাবেই কাটিয়ে দিতে চান জীবনটা।
(ছবি ঋণ - উত্তরবঙ্গ সংবাদ)