এক পা নিয়েই ১০৪ দিনে ১০৪টি ম্যারাথন! রেকর্ড দৌড়বিদের

ম্যারাথন। বিশ্বের প্রাচীন রেসগুলির অন্যতম। আধুনিক হিসাব অনুযায়ী, একজন ম্যারাথন দৌড়বিদকে দৌড়তে হয় ২৬.২ মাইল। যা একজন সুস্থ-সবল লোকের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। ফলে লাগাতার ১০০ দিনে ১০০টি ম্যারাথন দৌড়ানো প্রায় অসম্ভব একটি বিষয়। পেশাদার দৌড়বিদও হয়তো ভিরমি খেতে পারেন। ম্যারাথন রানারদের মধ্যেও হাতেগোনা মানুষ এই চ্যালেঞ্জ ছুঁয়ে দেখার চেষ্টা করবেন।

কিন্তু যাঁর একটা পা নেই? তিনি যদি এমন রেকর্ড করে বসেন? তাঁকে অতিমানব না-ভাবা ছাড়া আর কোনো উপায় আছে কি?

কিন্তু এমন অতিমানবীয় কাজটি করে দেখিয়েছেন আরিজোনার জ্যাকি হান্ট ব্রুয়ের্সমা। তিনি ১০৪ দিনে দৌড়েছেন ১০৪টি ম্যারাথন। একটা পা নিয়েই। কাটা পায়ের জায়গায় ছিল রানিং ব্লেড। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে শীঘ্রই জ্বলজ্বল করতে পারে তাঁর নাম।

এইবছর জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত চলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায় বড়ো হওয়া এই এন্ডিউরেন্স রানারের দৌড়। তিনি অবশ্য ‘রানিং’ শুরু করেন বছর ছয়েক আগে। শুরুতে পাঁচ কিলোমিটার দৌড়, হাফ ম্যারাথন, এবং পরে ম্যারাথন। ধীরে ধীরে ভালোবেসে ফেলছিলেন খেলাটিকে। 

এই গোটা যাত্রার বাঁকে বাঁকে উঁকি দিচ্ছিল চ্যালেঞ্জ। বস্টন ম্যারাথনে যোগ দেওয়ার আগে সামান্য ট্রেডমিল করেছিলেন জ্যাকি। এটা ছিল তাঁর ৫০তম ম্যারাথন। শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা দেখা দেয়। মাঝপথে দৌড় ছেড়ে দেওয়ার কথাও ভাবছিলেন তিনি। কিন্তু চোয়াল শক্ত করে ফিনিশিং লাইনে পৌঁছেছিলেন। 

জ্যাকি একজন মা। তিনমাসের দীর্ঘ অভিযান ক্রমে ব্যবধান বাড়াচ্ছিল মা ও সন্তানদের মধ্যে। ফলে তিনি প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ভেঙে ভেঙে দৌড়বেন ম্যারাথন। কিন্তু জনতার আঙুল উঠল তাঁর দিকেই। বলা হল, তিনি ম্যারাথনে নিয়ম ভাঙছেন। দাঁতে দাঁতে চেপে একদিনেই দুটো দৌড় শেষ করেন জ্যাকি।

‘আমি চাইনি, মানুষ আমাকে চিনুক একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী দৌড়বিদ হিসেবে। কেবল প্রমাণ করতে চেয়েছিলাম, শরীরকে কমফর্ট জোনের বাইরে ঠেলে দিলে যে-কেউ অসাধ্যসাধন করতে পারে’, বলেছেন জ্যাকি। এই ম্যারাথনের মাধ্যমে তিনি তুলেছেন ২০০,০০০ ডলার। যে টাকাটি খরচ হবে পা-হারানো দৌড়বিদদের জন্য। তবে এখানেই থামছেন না জ্যাকি। তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন।

আগামী বছরেই দুটি দৌড়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন তিনি। একটি ১০০ মাইল, অন্যটি প্রায় ২৫০ মাইল! জ্যাকি হান্ট ব্রুয়ের্সমার অভিধানে ‘অসম্ভব’ শব্দটি নেই বললেই চলে।

Powered by Froala Editor