প্যারাসুট কাপড়ে তৈরি ঢলঢলে পোশাক। তার সঙ্গে লাগানো ছোট্ট একটি বিদ্যুৎচালিত পাম্প। সেই পাম্প চালালেই হাওয়া ভরে ফুলে ওঠে কাপড়ের পোশাকটি। চেহারা নেয় মিকি মাউস কিংবা এমনই বিভিন্ন কার্টুন চরিত্রের। মেলায়, জন্মদিনের পার্টিতে, অ্যামিউজমেন্ট পার্কে কিংবা ছোটোদের অনুষ্ঠানে এই দৃশ্য চোখে পড়ে হামেশাই। তবে এমন আশ্চর্য পোশাক পরে যদি কাউকে চিড়িয়াখানা-জুড়ে দাপিয়ে বেড়াতে দেখেন?
হ্যাঁ, শুনতে খানিকটা অবাক লাগলেও সত্যি। ইংল্যান্ডের ল্যাঙ্কাশায়ারে অবস্থিত ব্ল্যাকপুল চিড়িয়াখানায় (Blackpool Zoo) সম্প্রতি দেখা গেল এমনই আশ্চর্য দৃশ্য। দৈত্যাকার এক ঈগলের পোশাক পরে এখন এই চিড়িয়াখানার পথে পথে ছুটে বেড়াচ্ছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা।
না, শিশু-কিশোরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের এই উদ্যোগ নয়। বরং, সিগাল (Seagull) অর্থাৎ গাঙচিলদের উপদ্রব এড়াতেই এমন আশ্চর্য সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। আসলে সমুদ্র থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটারের দূরে অবস্থিত ব্ল্যাকপুল চিড়িয়াখানা। আর সেখান থেকেই প্রতিদিন এই চিড়িয়াখানায় এসে হাজির হয় শত শত গাঙচিল। দৃশ্যত ব্যাপারটা অত্যন্ত মনোরম হলেও, দর্শনার্থীরা মোটেই খুশি মুখে মেনে নেন না তাদের এই উপস্থিতিকে। কারণ, চিড়িয়াখানার মধ্যে কোনো খাবার খাওয়ার জো নেই। মুহূর্তের মধ্যেই তা ছোঁ মেরে নিয়ে যায় এই বিশেষ প্রজাতির পাখিরা। গাঙচিলের উপদ্রবে বন্ধ হতে বসেছে চিড়িয়াখানার ভেতরে অবস্থিত বেশ কিছু খাবারের স্টল ও রেস্তোরাঁও।
তবে এখানেই শেষ নয়। সাম্প্রতিক সময়ে চিড়িয়াখানার পশুদের দেওয়া খাবারেও রীতিমতো ভাগ বসাচ্ছে গাঙচিলরা। পশুদের খেতে দেওয়া কাঁচা মাংস থেকে শুরু করে দানাশস্য— প্রায় সবকিছুই ‘চুরি’ করছে তারা। তবে উপায়?
না, গুলি করে হত্যা করা, ফাঁদ পাতার মতো সহিংস পথে হাঁটেনি চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বরং, এই উপদ্রব ঠেকাতেই দৈত্যাকার পাখির বেশে সেজে তাদের ভয় দেখানোর সিদ্ধান্ত। তবে এই কাজ করতে গিয়েও রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন চিড়িয়াখানার কর্মীরা। তাই সম্প্রতি গাঙচিল তাড়ানোর জন্য পৃথকভাবে পাঁচজন কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ব্ল্যাকপুল চিড়িয়াখানা। কাজ, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চিড়িয়াখানার মধ্যে দৈত্যাকার পাখির বেশে টহল দেওয়া। মাইনের কথা প্রকাশ্যে না জানালেও, সেটা নেহাত কম নয়। সবমিলিয়ে এ এক আশ্চর্য চাকরিই বটে।
Powered by Froala Editor