ভারতের বুকে যে কত বিচিত্র প্রজাতির প্রাণী একসময় বাস করতো বা এখনও বাস করে তার সঠিক হিসাব হয়তো কারোর কাছেই নেই। কিন্তু ব্ল্যাক প্যান্থারের নাম শোনেননি, এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। হিংস্র স্বভাবের এই জন্তুটির চরিত্রের থেকেও তার দেহের আকর্ষণ অনেক বেশি। উজ্জ্বল কালো লোমে ঢাকা শরীরে দুটি জ্বলজ্বলে চোখ, প্রথমেই মনে করিয়ে দেয় রুডিয়ার্ড কিপ্লিং-এর বাঘিরা চরিত্রটির কথা। যদিও সামনে থেকে এই প্রাণী দেখার সুযোগ সত্যিই বিরল। এমনকি বর্তমানে কালো চিতা বিলুপ্তির এতটাই কাছাকাছি চলে গিয়েছে যে, এর একটি ফটোগ্রাফও পরিবেশপ্রেমী মানুষের মনে বিপুল উৎসাহের সঞ্চার করে।
সম্প্রতি আইপিএস দীপাংশু কাবরা-র একটি ট্যুইটার পোস্টে দেখা যায় এই রাজকীয় প্রাণীটির ছবি। স্বাভাবিকভাবেই খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে ছবিটি। দীপাংশুবাবুর পোস্ট থেকে জানা যায়, প্রাণীটিকে দেখা গিয়েছে ছত্তিশগড়ের বিলাসপুর জেলার অচনক মার্গ টাইগার রিজার্ভ ফরেস্টের বনভূমিতে। বনের মধ্যে বাঘের সংখ্যা গণনা করার জন্য গাছের ডালে ক্যামেরা বসানো থাকে। সেই ক্যামেরাতেই ধরা পড়েছে এই ব্ল্যাক প্যান্থারের ছবি।
দীপাংশুবাবুর এই ছবিটি নিয়ে মন্তব্য করেছেন আইএফএস পারভিন কাশওয়ান। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে বিপন্ন পশুদের ছবি দিয়ে সচেতনতামূলক প্রচারের জন্য তিনি ইতিমধ্যে অনেকের কাছেই পরিচিত নাম। বহুদিন পর এই বিরল প্রাণীর দেখা মেলায় তিনি যে উচ্ছ্বসিত, সেকথা বলাই বাহুল্য। সেইসঙ্গে তাঁর মন্তব্য থেকে জানা যায়, কিছুদিন আগে দার্জিলিংএর আশেপাশে কোনো অঞ্চলে ব্ল্যাক প্যান্থারের সন্ধান পেয়েছেন স্থানীয় মানুষরা। হিমালয়ের দক্ষিণভাগের পার্বত্য অঞ্চলই এই প্রাণীর প্রকৃত বাসস্থান। এছাড়াও মে মাসের গোড়াতে গোয়ার নেত্রাবলী অভয়ারণ্যে দেখা মিলেছে একটি ব্ল্যাক প্যান্থারের। সামাজিক মাধ্যমে সেই প্রাণীর ছবি প্রচার করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। এক দশকের বেশি সময় ধরে দেখা নেই যে প্রাণীর, একমাসের মধ্যে তিনটি পৃথক জায়গায় তার সন্ধান পাওয়া সত্যিই আশ্চর্যের বিষয়।
ব্ল্যাক প্যান্থারের দীর্ঘদিন ধরে অত্যন্ত বিপন্ন প্রাণী। একশ বছর আগেও সচরাচর তার দেখা পাওয়া যেত না। মানুষের সঙ্গে তার পরিচয় নানা গল্প ও কাহিনির সূত্রে। আর তার মধ্যে অবশ্যই প্রথম মনে পড়ে 'জাঙ্গল বুক'-এর কথা। সেই কালো রঙের প্রাণী বাঘিরা, ছত্তিশগড়ের প্রাণীটিকেও সেই নামেই ডাকছে স্থানীয় মানুষ। তবে প্রাকৃতিক পরিবেশে কি হঠাৎ এমন কোনো পরিবর্তন ঘটল, যার ফলে আবার ফিরে আসতে চলেছে ব্ল্যাক প্যান্থারের? এমনটা সত্যি হলে তা সত্যিই আনন্দের বিষয়। এভাবেই অন্যান্য বিপন্ন প্রাণীরাও ফিরে পাক তাদের হারানো বাসস্থান।