ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। প্রকোপ বাড়ছে একাধিক রাজ্যে। এবার নড়ে চড়ে বসল কেন্দ্র সরকার। মিউকরমাইকোসিসকেও মহামারী আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পদক্ষেপ নিল স্বাস্থ্যমন্ত্রক। প্রতিটি রাজ্যকেই চিঠি দিয়ে জানানো হল, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের সমস্ত তথ্যই এবার নথির আকারে জমা দিতে হবে কেন্দ্রের কাছে।
সারাদেশে এখনও পর্যন্ত মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দু’ হাজার। যার সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে রাজস্থান, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে। ইতিমধ্যেই রাজস্থান ও তেলেঙ্গানা মহামারী হিসাবেই ঘোষণা করেছে এই রোগটিকে। তবে বাংলায় এখনও পর্যন্ত সেইভাবে ছড়িয়ে পড়েনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। আজ দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৪ জন।
প্রশ্ন থেকে যায়, এই ছত্রাকে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা ঠিক কতটা? “এটা একটা অপারচুনিটিক ইনফেকশন। যখন কোনো মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, সেইসময় ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস মানুষের শরীরে এসে বাসা বাঁধে। এক্ষেত্রে সেটা ফাঙ্গাস। ইউমিউনিটির এই সমস্যাটা অনেকক্ষেত্রে জন্মগত। আবার যাঁরা অন্য কোনো রোগে আক্রান্ত, বা সদ্য সুস্থ হয়ে উঠেছেন কোভিড থেকে তাঁদেরও প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই কম থাকে। এই কম ইউমিউনিটির বা যাঁরা অলরেডি ইউমিউনোকম্প্রোমাইসড তাঁদেরই মধ্যেই ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে”, বলছিলেন টাকি রুরাল হাসপাতালের চিকিৎসক তমোজিৎ গোস্বামী।
তবে কোভিড আক্রান্ত হওয়া মানেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হবে, এমনটা কিন্তু নয়। যাঁরা উপসর্গহীন কিংবা মাইল্ড— তাঁদের ক্ষেত্রে ইমিউনিটি-সংক্রান্ত এই সমস্যাটা দেখা দেয় না। মডারেট কোভিড পেশেন্টদের মধ্যে ৫০ শতাংশের ক্ষেত্রে কমে যায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে, সবমিলিয়ে দেখা যাচ্ছে মোট কোভিড আক্রান্তদের ১০-১৫ শতাংশের মধ্যে এই ছত্রাক সংক্রমণের সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন
মহারাষ্ট্রে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে মৃত ৫২, নতুন বিপর্যয়ের ইঙ্গিত?
একই কথা জানালেন নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক ডাঃ সৌমিতা পাল। “ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কোনো নতুন রোগ নয়। প্রতিবছরই কিছু সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হন এই রোগে। কোভিডের আবহেও বৃদ্ধি পেয়েছে সেই সংখ্যাটাই। মডারেট থেকে সিভিয়ার ঘটনায় স্টেরয়েডের ব্যবহার আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এই ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। কারণ স্টেরয়েড ইমিউনিটি কমিয়ে দেয় অনেকটাই।”
আরও পড়ুন
বেড়ে ওঠে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ‘খেয়ে’, এমনই অদ্ভুত ফাঙ্গাসের দিকে নজর গবেষকদের
কিন্তু কতটা সংক্রামক এই ছত্রাকঘটিত রোগ? তমোজিৎবাবু জানালেন, “ব্ল্যাক ফাঙ্গাস কোভিডের মতো ছোঁয়াচে রোগ নয়। সরাসরি আক্রান্ত ব্যক্তির ত্বকের সঙ্গে কেউ সংস্পর্শে না এলে অন্য কারোর সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা নেই সেভাবে।” তবে সতর্ক থাকতে হবে মানুষকে। যেহেতু এটা ছত্রাকবাহিত রোগ, তাই জলের মাধ্যমে ছড়াতে পারে সংক্রমণ। তমোজিৎবাবুর বললেন, “গ্রামে অনেকক্ষেত্রেই একই পুকুরে স্নান করে বহু মানুষ। সেক্ষেত্রে আক্রান্তের শরীর থেকে ছত্রাকটি ছড়িয়ে পড়ে পুকুরের জলে। ফলে বহু মানুষের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।”
তবে বাংলায় এখনও পর্যন্ত ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণ আশঙ্কাজনক মাত্রা না নিলেও, আগে থেকেই সতর্ক হতে বলছেন চিকিৎসকরা। করোনার আবহে যাতে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে দ্বিতীয় কোনো সংকট গড়ে তুলতে পারে, সেদিকেই জোর দিচ্ছেন তাঁরা। পরামর্শ দিচ্ছেন, উপসর্গ দেখা দিলেই যেন অবহেলা না করে দ্রুত টেস্ট করানো হয়। সৌমিতা পাল জানালেন, “যাঁরা ডায়াবেটিস বা ক্যানসারের মতো রোগে ভুগছেন, তাঁদের আরও সতর্ক হতে হবে কোভিডের বিষয়ে। নজরে রাখতে হবে তাঁদের শারীরিক অবস্থা। দেখতে হবে ইমিউনিটি কমছে কিনা।” বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এখনও হেলথ হ্যাজার্ডের পর্যায়ে পৌঁছায়নি বিষয়টি। বাড়তি সতর্কতা নিলে আরেকটা মহামারীর সম্ভাবনাকে এড়িয়ে যেতে পারে বাংলা…
Powered by Froala Editor