ভয় পাননি হুমকিতেও, একাই ৩৫ জনের প্রাণ বাঁচিয়েছেন ‘ডাইনি’র মা বিরুবালা

একবিংশ শতাব্দীতে, উন্নত প্রযুক্তির মাঝে বসে আছি আমরা। কথায় কথায় আধুনিকতার বান ছুঁড়ি। অথচ প্রতিবছর ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে শোনা যায় ‘ডাইনি মারার’ ঘটনা। এছাড়াও, ওঝার ঝাড়ফুঁক, তাবিজ ইত্যাদির মতো কুসংস্কার তো ছড়িয়েই রয়েছে। এহেন ‘আধুনিকতা’ যেখানে এখনও জাঁকিয়ে বসে আছে, সেখানেই আসামের একজন আদিবাসী, ‘নিরক্ষর’ মহিলা নিজের চেষ্টায় লড়াই করে যাচ্ছেন এইসব কুসংস্কার, ডাইনি প্রথার বিরুদ্ধে। তিনি, বিরুবালা রাভা।

তবে তাঁর এই লড়াই সহজ ছিল না একদমই। কারণ, তাঁর চারিদিকের পরিবেশ। আসামে যে আদিবাসী সমাজে বিরুবালা বাস করেন, সেখানে কুসংস্কারের প্রভাব প্রবল। ডাইনি অপরাধে প্রতি বছর সেখানে মারা যান বেশ কয়েকজন। ভেতর থেকে সবই বুঝতে পারতেন তিনি। কিন্তু একদিন তাঁর নিজের সংসারেই নেমে এল সেই অভিশাপ। তাঁর এক ছেলের মানসিক অসুস্থতা ছিল। আর সেই জন্যই, গ্রামের নেতা এবং অন্যান্যরা বিরুবালার সেই ছেলেকে ‘ডাইনি’ বলে ঘোষণা করে। ব্যস, তখন থেকেই সক্রিয়ভাবে লড়াই শুরু বিরুবালা রাভার। কিন্তু তাঁর পাশে তখন কেউ ছিল না। মাত্র ১৬ বছর বয়সে বিয়ে করে এখানে এসেছিলেন। মা-বাবাও মারা গেছে ছোটোবেলাতেই। কোথায় যাবেন তিনি? ছেলেকে বাঁচাতে, একা হাতে কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন তিনি।

এই লড়াইতে অনেক বিপদে পড়েছিলেন বিরুবালা। গ্রামের সবাই তাঁকে একঘরে করে দেয়। নানা হুমকি আসতে থাকে, এমনকি খুনের চেষ্টাও করা হয়। কিন্তু প্রতিবাদের রাস্তা থেকে কখনও সরে আসেননি তিনি। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তাঁর এই প্রবল লড়াই ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকে বাইরের পৃথিবীতে। আস্তে আস্তে লোক জড়ো হয় এই আন্দোলনে। ২০১২-তে তৈরি হয় ‘মিশন বিরুবালা’। অবশ্য তার আগেই একার চেষ্টায় ৩৫ জন মহিলার প্রাণ বাঁচান বিরুবালা রাভা। আর তাঁর এই মিশন এখনও অবধি ১০০ জনেরও বেশি মানুষকে নতুন জীবন দিতে পেরেছে। তাঁর এই চেষ্টা যাতে পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়ে, সেটাই আমাদের প্রার্থনা। শুধু প্রার্থনা নয়, চেষ্টাও। যাতে কুসংস্কারের এই অন্ধকার ভারতের আকাশ থেকে চিরতরে মুছে যায়।