নিজেকে 'জাদুকর' ভাবতেন চ্যাপলিন, চাইতেন না ফাঁস হোক তাঁর গোপন সিনেমাশৈলী

'কমিউনিস্ট', 'এনার্কিস্ট', 'দেশদ্রোহী'র তকমা তাঁর আগেও জুটেছিল। প্রথমে নিজের দেশে। পরে যুক্তরাষ্ট্রে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। কিন্ত অদ্ভুতভাবে সৈনিকদের প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠে কালো বোওলার হ্যাট, শতচ্ছিন্ন জামা, ফুটিফাটা জুতো পায়ে 'ট্র্যাম্প'। কেনিংটনের অন্ধকার ওয়ার্কহাউস, মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা মা, চূড়ান্ত দারিদ্র… চ্যাপলিনের চরিত্রগুলো কোথাও তাঁর নিজের জীবনেরই প্রতিফলন। বলতে বাধা নেই, এমন ছেলেবেলা অনেককে ঠেলে দেয় অন্ধকারের দিকে। আর চার্লি চ্যাপলিন লোক 'হাসিয়েছেন'। বিশ্বজুড়ে নাম। খ্যাতি। আদৌ কি তাই?

'ট্র্যাম্প' ঢুকে পড়ছে ধনীবাবুর পার্টিতে। পুলিশভ্যানে। অভিজাত দোকানে। ফাঁপা, ভঙ্গুর এক সভ্যতার উৎকট প্যারোডি আঁকছেন চ্যাপলিন। প্রত্যেকটি হাসির পেছনে, হাততালির পেছনে রয়ে যায় নিষ্ঠুর বিদ্রুপ, নিষ্ফল আক্রোশ। চ্যাপলিন হাসাচ্ছেন আমাদের। সে হাসি মোটেও সরল না। আসলে নিজেদের অক্ষমতা দেখেই হেসে ফেলে সভ্যতা…

মর্ডান টাইমসের সেই বিখ্যাত দৃশ্যগুলো মনে পড়ে? যন্ত্রের মতো মানুষ নাটবল্টু এঁটে চলেছে। অন্যদিকে নতুন মেশিনকে গড়ে তোলা হয়রছে অনেকটা মানুষের আদলেই। একগাদা ভেড়ার পালের মাঝে চ্যাপলিনকে বাছা হচ্ছে 'গিনিপিগ' হিসেবে। না-মানুষী এই ষড়যন্ত্রের শিকার মানুষ। তার মানবিক সত্বা। চেতনা। শিকারি, পুঁজি আর পুঁজিপতিরা। মর্ডান টাইমস তাই এই সময়েও পুঁজি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একরোখা কন্ঠস্বর।

চ্যাপলিন কখনও নিজের সিনেমাশৈলী সম্পর্কে তেমন বলে যাননি। নিজেকে মনে করতেন, 'জাদুকর'। জাদুবিদ্যার গুপ্তকথা সর্বসমক্ষে ফাঁস করা পাপ। নিয়মবিরুদ্ধ।

'দ্য গ্রেট ডিক্টেটর' ছবিটি, তাঁর নিষ্ঠুর হিউমারের তুলনায় বেশ নরম। আশাবাদী। যে সিনেমার শেষে সিনে, বদলে যাওয়া 'হের হিংকেল' (হিটলারের প্যারোডি), মঞ্চে উঠে শান্তির বাণী শোনায়। যুদ্ধ শেষ হয়। আসলে চ্যাপলিন জানতেন না কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের কথা। যখন জানতে পারলেন…

১৯৪৭ এ মুক্তি পাচ্ছে 'মসিয়ে ভেরদু'। গ্রেট ডিক্টেটরের মতো 'ভুল' আর করেননি তিনি। বরং প্রায়শ্চিত্ত করেছেন ,খুনে 'ভেরদু'র মধ্যে দিয়ে। শেষ সিনের সেই অমোঘ সংলাপ এখনও প্রশ্ন তোলে ব্যবস্থাটাকে নিয়ে…

"Wars, conflict - it's all business. One murder makes a villain; millions, a hero. Numbers sanctify, my good fellow!"

স্ক্রিনের ভেতরে দর্শকদের দিকে চেয়ে হো-হো হেসে ওঠে 'ট্র্যাম্প'। দৈনন্দিন স্বাভাবিকতা-সামাজিকতার বুনিয়াদ বড্ড হাস্যকর। রাজনৈতিক ঠিক-ভুলের কাঠামোয় গাঁথা। হয়তো, চ্যাপলিন এই বুনোট ভাঙতে চেয়েছিলেন। অথবা…

আজ তাঁর জন্মদিন।

Powered by Froala Editor