গত ২০ আগস্ট এক অদ্ভুত ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল মার্কিন সেনাবাহিনীর হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জ। মিলেছিল হাজার হাজার পাখিদের মৃতদেহ। তবে শুধু এখানেই নয়, দোয়া আনা কাউন্টি, জেমেস পুয়েবলো, রোজওয়েল, সোকোরো, নিউ মেক্সিকো-সহ যুক্তরাষ্ট্রের বহু অঞ্চলেই এই ঘটনা চোখে পড়ছে তারপর থেকেই। রহস্য-সমাধানে কাজে নেমেছিলেন বিজ্ঞানীরাও। আর তার থেকেই উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। এও সেই আবহাওয়া পরিবর্তনেরই ফলাফল।
নিউ মেক্সিকো স্টেট ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী মার্থ ডেসমন্ড শনিবার সংগ্রহ করলেন প্রায় ৩০০টি বিভিন্ন প্রজাতির পাখির মৃতদেহ। প্রাথমিকভাবে তাদের শনাক্তকরণ এবং তালিকাবদ্ধ করে সেগুলি নেক্রোপসিসের জন্য ওরেগনের ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস ফরেনসিক ল্যাবরেটরিতে পাঠান তিনি। পাশাপাশিই আঞ্চলিক ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃত্যু পূর্ববর্তী সময়ে পাখিদের আচরণের বিষয়ে একটি সমীক্ষা করেন তিনি এবং তাঁর দল।
সমীক্ষায় উঠে আসে, আঞ্চলিক বাসিন্দারা পাখিদের মধ্যে অস্বাভাবিকতাই খেয়াল করেছিলেন। স্বাভাবিক চাঞ্চল্যের পরিবর্তে অলস এবং প্রতিক্রিয়াহীন মনোভাবই নজর কেড়েছিল বলে জানান স্থানীয়রা। অনেকক্ষেত্রে রাস্তায় বসে থাকাকালীন গাড়ির ধাক্কাতেও মৃত্যু হয়েছে পাখিদের। উঠে আসে এমন অদ্ভুত তথ্যও। মার্থা ডেসমন্ড উল্লেখ করেন তিনি নিজেও প্রত্যক্ষ করেছেন এই দৃশ্য। কিছু প্রজাতির পাখি শুধুমাত্র উড়ন্ত পতঙ্গ শিকার করে খায়। তাদেরকে গাছের ডালেও বসতে দেখা যায় খুবই কম। এমন পাখিদেরই তিনি হোয়াইট স্যান্ডস মিসাইল রেঞ্জে মাটিতে বসে থাকতে দেখেছেন। এমনকি মানুষ তাদের কাছে গেলেও উড়ে যাচ্ছে না তারা।
তিনি জানান, প্রথমে এই ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বলে মনে হলেও বিভিন্ন অঞ্চলে একই সঙ্গে বাড়তে থাকা পাখিদের মৃত্যু কোনো যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। পুরো বিষয়টার পর্যালোচনার পর উঠে আসে অধিকাংশ পাখিই পরিযায়ী। রয়েছে ওয়ার্বলার, ব্লুবার্ডস, স্প্যারো, ব্ল্যাকবার্ডস, ওয়েস্টার্ন উড পিউইয়ি এবং ফ্লাই ক্যাচার্স।
আরও পড়ুন
ঘর হারিয়েছে পাখিরাও, আমফানের পর ছন্নছাড়া উড়ে বেড়াচ্ছে শহরজুড়ে
প্রাথমিকভাবে তিনি মনে করছেন, আমেরিকায় ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডেরই প্রভাব পড়েছে তাদের ওপর। বিষাক্ত ধোঁয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফুসফুস। তবে এ বিষয়ে ফরেন্সিক পরীক্ষার পরেই নিশ্চিতভাবে বলা যাবে বলে জানান তিনি। তবে দাবানলের জন্যই এই পরিযায়ী পাখিরা অসময়েই পাড়ি দিয়েছে তা স্পষ্ট। অনেক পাখি আবার পরিযায়নের পথ পাল্টে ফেলেছে দাবানলের কারণে। সেইসঙ্গে শুষ্ক আবহাওয়ায় নিজেদের মানিয়ে নিতেও অসুবিধা হচ্ছে তাদের।
আরও পড়ুন
খাবারের সঙ্গে পাখির ভিতরে যাচ্ছে প্লাস্টিকও, চিন্তিত পরিবেশবিদরা
১৯৭০ সাল থেকে আমেরিকায় প্রায় ৩০০ কোটি পাখির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে বলে জানান মার্থা। তবে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই এত সংখ্যক পাখির মৃত্যু যে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। অন্যদিকে বিশ্ব উষ্ণায়ণ যে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে এই ঘটনা...
আরও পড়ুন
ডিম-শুদ্ধু পাখির বাসা বাঁচিয়েই ফসল কাটলেন কৃষক, মানবিকতার অনন্য ছবি
Powered by Froala Editor