স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে রেলগাড়ি। রেলগাড়ির মধ্যে রয়েছে ওষুধপত্র, অপারেশন থিয়েটার। এমনকি রয়েছেন চিকিৎসকরাও। আসলে এই রেলগাড়িই এক চলমান হাসপাতাল। বলা ভালো, বিশ্বের প্রথম হাসপাতাল রেল ‘জীবনরেখা এক্সপ্রেস’। ১৯৯১ সালে ভারতে শুরু হয় অভিনব এই পরিকল্পনা। বর্তমানে পৃথিবীর নানা দেশে এই ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ভারতের একমাত্র হাসপাতাল রেল এবার পশ্চিমবঙ্গে। রবিবার জীবনরেখা এক্সপ্রেসের ২১৪ তম প্রকল্পের কর্মসূচি অনুযায়ী বীরভূম জেলার চিনপাই রেলওয়ে স্টেশনে এসে থেমেছে এই ট্রেন।
১৯৯১ সালে ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রক, রেল মন্ত্রক এবং ইমপ্যাক্ট ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থা মিলিতভাবে শুরু করে এই হাসপাতাল রেলের কাজ। প্রথমে আসাম ডিভিশনের অধীনে কাজ শুরু হয়। ধীরে ধীরে গত ৩০ বছরে দেশের নানা রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গিয়েছে এই ট্রেন। জীবনরেখা এক্সপ্রেসের পরিকাঠামোয় যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক নানা সরঞ্জাম। প্রথমে ১২ কামড়ার রেলগাড়ি হিসাবে শুরু হলেও ২০০৭ সালে তার সঙ্গে যুক্ত হয় আরও ৫টি কামরা। বর্তমানে এই ট্রেনে রয়েছে ১টি বিশ্বমানের ডিসপেনসারি, ৩টি অপারেশন টেবিল যুক্ত একটি থিয়েটার এবং ২টি অপারেশন টেবিলযুক্ত আরও দুটি আনুষাঙ্গিক থিয়েটার। চোখের ছানি অপারেশন থেকে শুরু করে কিডনি বা হৃৎপিণ্ডের জটিল অস্ত্রপ্রচার, সবই হয় এই ট্রেনের মধ্যেই। নির্দিষ্ট সূচি মেনে রেলের কামরায় হাজির হন দেশের বিখ্যাত চিকিৎসকরাও।
এর আগেও পশ্চিমবঙ্গে তিনবার এসেছে জীবনরেখা এক্সপ্রেস। ১৯৯৪ সালে মেমারি রেলস্টেশনে থেমেছিল গাড়িটি। এরপর ২০০৯ সালে জঙ্গলমহলে পৌঁছে যায় জীবনরেখা এক্সপ্রেস। ২০১৩ সালে জলপাইগুড়ি শহরে ঠিকানা হয় তার। গত ৩০ বছরে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষের চিকিৎসা করেছে জীবনরেখা এক্সপ্রেস। ২০১৪ তম প্রকল্পের অধীনে চিনপাই রেলওয়ে স্টেশনের সিদ্ধান্ত অবশ্য নেওয়া হয়েছিল আগেই। প্রায় ১ বছরের প্রস্তুতির পর শুরু হয়েছে কাজ। রবিবার সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী এবং রেল আধিকারিক চন্দ্রকান্ত দেশপাণ্ডের উপস্থিতিতে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। ইতিমধ্যে ২ জন রোগীর চোখের ছানি অপারেশন হয়ে গিয়েছে। রেলস্টেশনে রোগীর ভিড় যেমন রয়েছে, তেমনই অবাক করা এই রেলগাড়ি দেখতেও ভিড় জমিয়েছেন অনেকে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
রেলের শতবর্ষ-প্রাচীন টাইমটেবিল এবার ডিজিটাল আর্কাইভে