আগাগোড়া কংক্রিটের তৈরি বাস-বাড়ি, অভিনব কীর্তি বীরভূমের মৃৎশিল্পীর

নীল-হলুদ রং করা একটি বাস। তার গায়ে লেখা, বোলপুর থেকে সিউড়ি। রয়েছে যাত্রাপথের প্রতিটা স্টপের নাম। দুদিকে যাত্রী ওঠানামার জন্য দুটি দরজা। কিন্তু এই বাসের পা-দানিতে পা রাখলেই ভুলটা নজরে আসবে। ভিতরে নেই যাত্রীদের বসার কোনো আসন। আসলে বাস নয়, কংক্রিটের তৈরি আস্ত একটা বাড়ি। এমনই এক আশ্চর্য বাস-বাড়ি বানিয়ে তুলেছেন বীরভূমের পাড়ুই থানার ধানাই গ্রামের বাসিন্দা উদয় দাস।

উদয়বাবু পেশায় মৃৎশিল্পী। অবশ্য ছোটবেলায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজও করেছেন। তখন থেকেই বাড়ি তৈরির খুঁটিনাটি তাঁর জানা। এরপর পৈতৃক পেশার সূত্রে মৃৎশিল্পীর কাজ শুরু করেছেন। প্রতি বছর সমস্ত পূজা-অনুষ্ঠানের জন্য মূর্তি তৈরি করে চলেছেন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তৃপ্তি পেত না শিল্পীমন। সবসময় এমন একটা কিছু করতে চাইতেন, যা হবে একেবারে অন্যরকম। বাস-বাড়ি তৈরির পরিকল্পনাও করেছেন অনেক আগে থেকেই। কিন্তু অভাবের সংসারে চাইলেই তো সবসময় সব করা হয়ে ওঠে না। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ব্যাঙ্ক থেকে টাকা ধার নিয়ে লেগে পড়লেন কাজে।

দৈর্ঘ্যে ২২.৫ ফুট, প্রস্থে ৮ ফুট এই বাসবাড়ি। ভিতরে রয়েছে দুটি ঘর এবং একটি রান্নাঘর। আর বাইরে থেকে? বাসের চাকা, দরজার পাশাপাশি আছে পিছনের বাম্পার, ছাদে ওঠার সিঁড়ি। বাসের মতোই সারি সারি জানলা, কেবিনের সামনে লুকিং-গ্লাস। আসলে এই কেবিনটাই রান্নাঘর। গতবছর লকডাউনের শুরু থেকেই কাজে লেগে পড়েছেন উদয়। মাঝখানে কিছুদিন হার্ডওয়্যারের জিনিসের দাম বেড়ে গিয়েছিল অনেকটাই। ফলে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। সপ্তাহখানেক হল কাজ শেষ করতে পেরেছেন তিনি।

বাড়ি তৈরির সময় থেকেই গ্রামবাসীদের কাছে বেশ আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছিল এই বাসবাড়ি। মজুরির পয়সা দেওয়ার ক্ষমতা তাঁর নেই। তাই সব কাজটাই করেছেন স্ত্রী-পুত্রকে সঙ্গে নিয়ে। চারটি চাকার জায়গা থেকে তুলেছেন চারটি পিলার। বাড়ির রংও করেছেন তিনি নিজেই। গ্রামবাসীরা মাঝেমাঝেই এসে ভিড় জমিয়েছেন কাজ দেখতে। আর বাড়ি তৈরি হয়ে যাওয়ার পর আশেপাশের গ্রাম এমনকি দূরদূরান্ত থেকেও দেখতে এসেছেন অনেকে। তাঁর কাজ যে মানুষের ভালো লেগেছে, এতেই খুশি উদয়। অবশ্য মাথায় ব্যাঙ্কের ঋণের বোঝাও রয়েছে। সেই টাকা কীভাবে শোধ করবেন, জানেন না শিল্পী। প্রতিমা তৈরির কাঁচামালের দামও প্রতি বছর বাড়ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে বাড়ছে না প্রতিমার দাম। ফলে আয় কমেছে। আর্থিক দুশ্চিন্তা তো রয়েছেই। কিন্তু ছেলেবেলার স্বপ্ন পূরণ করতে পারার তৃপ্তিই সবচেয়ে বেশি। যে সিউড়ি-বোলপুর বাসে যাতায়াত করেছেন বহুবার, সেই বাসের মধ্যেই এবার পুরো পরিবার নিয়ে বাস করতে পারবেন তিনি।

আরও পড়ুন
ধুঁকছে মেদিনীপুরের পালাগান, দুঃস্থ শিল্পীদের পাশে স্বেচ্ছাসেবীরা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
বালি দিয়ে তৈরি ২১ মিটার প্রাসাদ, ডেনমার্কের শিল্পীদের বিশ্বরেকর্ড