ফুট চল্লিশেক চওড়া খাল। তবে তার গভীরতা অত্যন্তই কম। বড়োজোর কোমর অবধি জল। কোথাও আবার তারও কম। ফ্লোরিডার এই খালই সংযোগ স্থাপন করে হিলসবরো নদী ও ট্যাম্পা উপসাগরের মধ্যে। ফ্লোরিডা সংলগ্ন কৃষিজমিতে সরবরাহ করে সেচের জল। এবার সেখানেই দেখা গেল এক অদ্ভুত দৃশ্য। নদীর বুকে মানবপ্রাচীর গড়ে তুলেছেন বেশ কিছু মানুষ। ক্রমাগত আন্দোলিত করছেন ফ্লোরিডা ক্যানালের স্থির জলকে। সেইসঙ্গে মানবপ্রাচীরের ঠিক পিছনেই লোহার ডিঙিতে চেপে ক্রমাগত যান্ত্রিক আওয়াজ করে চলেছেন আরেক ব্যক্তি।
এই দৃশ্য দেখে সকলের মনেই বিষ্ময় জাগার কথা। ব্যাপার কী? আসলে হাতে হাত রেখে যাঁরা এই 'ব্যারিকেড' গড়ে তুলেছেন ফ্লোরিডা ক্যানালের বুকে, তাঁরা সকলেই গবেষক। আরও বিশেষ করে বলতে গেলে জীববিজ্ঞানী। আর এত আয়োজন ফ্লোরিডা ক্যানালে (Florida Canal) আটকে পড়া একটি ডলফিনকে (Dolphin) বাঁচাতে।
গত সপ্তাহের সোমবারের কথা। ফ্লোরিডা খালের নিকটে বসবাসকারী ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুর ফোন পেয়েছিলেন ক্লিয়ারওয়াটার মেরিন অ্যাকোয়ারিয়ামের প্রাণীবিদ ও প্রাণী-উদ্ধার বিশেষজ্ঞ ব্রিটানি বলড্রিকা। জানতে পারেন, সেই খালে নাকি দু'দিন ধরে আটকে রয়েছে একটি ডলফিন। নড়াচড়া করছে ঠিকই, তবে অবস্থান পরিবর্তন করছে না এতটুকুও। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনাস্থলে হাজির হন ব্রিটানি। বুঝতে পারেন, অগভীর জলে একোলোকেশনের ক্ষমতা হারিয়েছে ডলফিনটি। পাশাপাশি খালে সাধারণত প্রবাহিত হয় মিষ্টি জল। লবণাক্ত জলের প্রাণী হওয়ায়, এই পরিবেশে প্রতিকূল হয়ে উঠেছে ডলফিনটির কাছে। তবে উপায়?
না, বলতে গেলে, ডলফিনটিকে বাঁচানোর কোনো সহজ উপায় ছিল না ব্রিটানির কাছে। তার কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী সুরক্ষা আইন। এই আইনেই উল্লেখিত রয়েছে ডলফিন, তিমি কিংবা মানাটিসের মতো প্রাণীদের স্পর্শ করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কারণ, মানবস্পর্শ পেলে এইধরনের প্রাণীদের বর্জন করে তাদের 'সমাজ'। হ্যাঁ, ডলফিন বা তিমিরাও আমাদের মতোই সামাজিক জীব। কাজেই সরাসরি উদ্ধারকার্যে নেমে পড়তে পারেননি ব্রিটানি। বরং, শুরু করেন বিকল্পের অনুসন্ধান।
গত বুধবার তাঁর নেতৃত্বেই ফ্লোরিডা ক্যানালে সামিল হন ওয়াইল্ডলাইফ কমিশন, ক্লিয়ারওয়াটার অ্যাকোয়ারিয়াম এবং ন্যাশনাল ওসানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিরিক অর্গানাইজেশনের ২৮ জন জীববিজ্ঞানী। ডলফিনটির থেকে ফুট দশেক দূরে গড়ে তোলেন মানবপ্রাচীর। হাতের সাহায্যেই আন্দোলিত করেন খালের জল। সেইসঙ্গে পিছনে নৌকা থেকে যান্ত্রিক আওয়াজ। হ্যাঁ, এই শব্দই ডলফিনটিকে একোলোকেশন ফিরে পেতে সাহায্যপ করেছে। ধীর গতিতে হলেও আধ মাইল পথ পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত মোহনায় পৌঁছায় ডলফিনটি। গোটা পথটাই তার সঙ্গে সঙ্গেই এগিয়ছিল ৩০ গবেষকের মানবরপ্রাচীর। আইনকে মান্যতা দিয়েই, সামুদ্রিক স্তন্যপায়ীর প্রাণ বাঁচানোর এই উদ্যোগ কুর্নিশযোগ্যই বটে...
Powered by Froala Editor