সময়টা ১৯৭৪ সাল। বিশেষজ্ঞরা মনে করেছিলেন, আফ্রিকার মৌরিটিয়াস পাখির অস্তিত্ব বুঝি শেষ হয়ে এসেছে। সারা পৃথিবীতে তখন আর মাত্র ৪টি পাখির অস্তিত্ব আছে। আর তার মধ্যে মাত্র একটি স্ত্রী পাখি। কিন্তু সেই অবস্থা থেকেও যে আবার অস্তিত্ব ফিরে পাবে বিলুপ্তপ্রায় এই প্রজাতি, সেটা কেউই ভাবতে পারেননি। তবে এই ঘটনা কোনো প্রাকৃতিক বিস্ময় নয়। বরং একটি মানুষের চেষ্টাতেই সেটা সম্ভব হয়েছে। আর শুধু মৌরিটিয়াস পাখিই নয়, আরও ১২টি বিরল প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা করেছেন উত্তর ক্যারোলিনাবাসী জীববিদ কার্ল জোনস।
মৌরিটিয়াস পাখির বিলুপ্তির খবর শুনেই জোনস হাজির হন আফ্রিকা মহাদেশে। তখন একমাত্র স্ত্রী পাখিটির প্রজনন ঋতু চলছে। কিন্তু জোনস ঠিক করলেন তার বাসা থেকে ডিম চুরি করবেন। ঠিক যেভাবে গৃহপালিত পাখির কাছ থেকে ডিম সংগ্রহ করে মালিক। বাসায় নিজের ডিমটি নেই দেখে পাখি আবার ডিম পারে। অন্যদিকে চুরি করা ডিম থেকে কৃত্রিম পদ্ধতিতে নতুন শাবকের জন্ম দেন জোনস। এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে বেশ কয়েকবার। আর এখন ৪০০টির বেশি পাখি আছে সারা আফ্রিকায়।
সেই থেকে কাজ শুরু করেছেন কার্ল জোনস। পাঁচ দশক পেরিয়ে আজও তিনি অক্লান্ত। ঠিক যে পাঁচটি দশকে পৃথিবীর ৫০ শতাংশ প্রাণী সঙ্কটজনক আখ্যা পেয়েছে, তখনই তার বিপরীতে উপস্থিত থেকেছে জোনসের প্রচেষ্টা। অবশ্য তাঁর কাজের পদ্ধতি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। এও তো একভাবে প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করাই! অন্যদিকে জোনসের প্রশ্ন, এই সংকটের সময় কি প্রকৃতিকে একটু একটু করে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যেতে দেখব? বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক থাকবেই। কিন্তু জোনসের এই প্রচেষ্টার ফলে যে জীববৈচিত্র্যের অনেকটাই সুরক্ষিত হয়েছে, সেকথা বলাই বাহুল্য।
Powered by Froala Editor