‘পরিচয়’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীতে ছিলেন এই বাঙালি বিজ্ঞানী, ছাপ রেখেছেন রাজনীতিতেও

বাংলা ভাষা, সাহিত্য এবং বিজ্ঞান— এই তিনের মেলবন্ধন বেশ কয়েকবার দেখেছি আমরা। তাঁরা যেমন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও ছিলেন স্বনামধন্য, তেমনই সাহিত্য, কবিতার দিকেও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যেই অন্যতম উল্লেখযোগ্য ছিলেন বিজ্ঞানী অমরনাথ ভাদুড়ী।

অমরনাথ ভাদুড়ীর পরিচয় শুধুমাত্র একজন বিশিষ্ট বৈজ্ঞানিক হিসেবে নয়। তাছাড়াও তাঁর পরিচিতি ছিল একজন আদর্শ শিক্ষক, সমাজপ্রেমী, সাহিত্যানুরাগী মানুষ হিসেবে। ১৯৩৫ সালে উত্তর কলকাতায় জন্ম নেওয়া অমরবাবুর পড়াশোনা শুরু হয়েছিল স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুলে। তারপর প্রেসিডেন্সি হয়ে গবেষণার কাজে চলে যান আমেরিকার মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে কেমিক্যাল বায়োলজি নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। পরবর্তীকালে এই বিষয় নিয়েই তাঁর যাবতীয় কাজ। কোষের মধ্যে ইউডিপি-গ্লুকোজ ৪-এপিমারেজ বলে একটি বিশেষ প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁর গবেষণা সমাদৃত। ১৯৬৬ সালে দেশে ফিরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের সঙ্গে যুক্ত হন তিনি। একটা সময় ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি’র অধিকর্তা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। পরবর্তীকালে বিজ্ঞানে সামগ্রিক অবদানের জন্য পান বহু পুরস্কার। যার মধ্যে ছিল শান্তিস্বরূপ ভাটনগর পুরস্কার, যেটা বিজ্ঞান চর্চায় ভারতে অন্যতম সেরা সম্মান।

সারাজীবন শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বিজ্ঞানী অমর ভাদুড়ী। তবে এসবের পাশাপাশি বিজ্ঞান সচেতনতার প্রচার ও প্রসার নিয়েও যথেষ্ট উদ্যোগী ছিলেন তিনি। যুক্ত ছিলেন বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ, বিজ্ঞান মঞ্চের সঙ্গেও। এমনকি, কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে কলকাতা কর্পোরেশনের কাউন্সিলার পদেও নির্বাচিত হয়েছিলেন একসময়।

এই সবকিছুর পাশেই থাকবে তাঁর সাহিত্যপ্রীতি। তাঁর দাদু ছিলেন প্রেসিডেন্সির কেমিস্ট্রি বিভাগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা চন্দ্রভূষণ ভাদুড়ী। সাহিত্যিক সতীনাথ ভাদুড়ী সম্পর্কে ছিলেন আত্মীয়। এমন পরিবারই ছোটো থেকে পেয়ে এসেছেন তিনি। সেইসঙ্গেই বেড়েছে তাঁর কবিতার প্রতি আকর্ষণও। একসময়, বিখ্যাত ‘পরিচয়’ পত্রিকার সম্পাদকমণ্ডলীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। জীবনানন্দ দাশ, বিনয় মজুমদার, শঙ্খ ঘোষ, অরুণ মিত্র প্রমুখ কবিরা ছিলেন তাঁর প্রিয়তম। নিজেও লিখেছিলেন বিজ্ঞান বিষয়ক বেশ কিছু বই। সেখানে তাঁর ভাষাপ্রয়োগ যেমন সরল, তেমনই চমৎকার।

একটা মানুষ তাঁর জীবনকালে এত রকম দিকে গিয়েছেন। প্রায় সমস্ত রকমের কাজই নিজের জীবদ্দশায় করেছিলেন অমর ভাদুড়ী। কিন্তু নিজের বৈজ্ঞানিক সত্তাকে কোথাও হারিয়ে যেতে দেননি। হারিয়ে যেতে দেননি জীবনকেও। যে ক’দিন ছিলেন, চুটিয়ে উপভোগ করে গেছেন প্রতিটা মুহূর্তই।

ঋণ – সিদ্ধার্থ মজুমদার, উইকিপিডিয়া