গ্রন্থাকারে প্রকাশ ‘বিলু রাক্ষস’, চাঁদের হাট নন্দনে

/১১

পাঁচ বছর আগে মুক্তি পেয়েছিল যে ছবি, এ যেন তার দ্বিতীয় মুক্তি। গতকাল নন্দন-২ প্রেক্ষাগৃহে গ্রন্থাকার প্রকাশিত হল ইন্দ্রাশিস আচার্যের চলচ্চিত্র ‘বিলু রাক্ষস’-এর চিত্রনাট্য— ‘বিলু রাক্ষস : সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’। পাঁচ বছর পর নন্দনের পর্দায় স্ক্রিনিংও হল চলচ্চিত্রটিরও।

/১১

গ্রন্থটি প্রকাশের নেপথ্যে ‘কলিকাতা লেটারপ্রেস’। এই প্রকাশনা থেকেই প্রকাশিত হয়েছিল ‘বাকিটা ব্যক্তিগত’ চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যও।

/১১

এই গ্রন্থপ্রকাশ অনুষ্ঠানকে উপলক্ষে নন্দন-২ প্রেক্ষাগৃহজুড়ে চাঁদের হাট। ছবির অভিনেতা জয় সেনগুপ্ত, অভিনেত্রী কাঞ্চনা মৈত্র, সুরকার জয় সরকার ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বরুণ চন্দ, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা।

/১১

“এই ছবিতে আমার কোনো ভূমিকা নেই, আমি অভিনয়ও করিনি। তাও মনে হচ্ছে, আমিও এই ছবির অংশ। ছবির সঙ্গে যুক্ত থেকেই যে ছবিতে অংশগ্রহণ করা যায়, তা নয়। অনেক সময় উপলব্ধির মধ্যে দিয়েও কোনো ছবির অংশ হয়ে ওঠা যায়। ‘বিলু রাক্ষস’ আমার জীবনে তেমনই একটা ছবি”, বলছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত।

/১১

‘কলিকাতা লেটারপ্রেস’-এর কর্ণধার ও প্রকাশক পলাশ বর্মণ বলছিলেন, “এই বইয়ের গোটা নাম ‘বিলু রাক্ষস : সম্পূর্ণ চিত্রনাট্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’। এই অন্য প্রসঙ্গের মধ্যে আছে, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত ‘বিলু রাক্ষস’ ছবিটির নানান রিভিউ। শুধু তাই নয়, গণমাধ্যমেও ‘বিলু রাক্ষস’-কে নিয়ে যাঁরা লিখেছিলেন, সে-সবও যথাসম্ভব সংকলিত হয়েছে এই বইটিতে।” বিভিন্ন রকমের মূল্যায়ন এবং গণমাধ্যমকে একত্রিত করে দুই মলাটের বন্দি করার এই প্রয়াস একটু ব্যতিক্রমীই।

/১১

পরিচালক-জীবনের শুরুতে বেশ কয়েকটি স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি বানালেও ‘বিলু রাক্ষস’-ই ইন্দ্রাশিসের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছবি। এই চলচ্চিত্র জন্ম দেওয়ার তৃপ্তি তাঁর মধ্যে আজও বহমান। তবে ইন্দ্রাশিসের আজ মনে হয়, এখন বানালে ‘বিলু রাক্ষস’-এ বেশ কিছু পরিবর্তন আনতেন। সম্ভব হলে, একটা থই থই শূন্যতা ঘেরা বাড়িতে বিলুর আর্তনাদ বুনে দিতেন তিনি।

/১১

‘বিলু রাক্ষস’ বড়ো প্রোডাকশন হাউসের ড্রিম প্রোজেক্ট নয়। ছিল না বিপুল অর্থলগ্নিও। এ-ছবি এক কথায় ইনডিপেন্ডেন্ট। ইন্দ্রাশিসের বক্তব্যে বার বার উঠে আসছিল তাঁর বন্ধুদের কথা। তাঁরা পাশে না দাঁড়ালে এ-ছবি হত না। অভিনেতা জয় সেনগুপ্তের কথায়, বিভিন্ন মানুষের ‘কোলাবরেশন’ এই ছবির জনক।

/১১

জয় সেনগুপ্তের সঙ্গে ইন্দ্রাশিস আচার্যের আলাপটিও বেশ মজার। সেই কথাও উঠে এল জয় সেনগুপ্তের স্মৃতিচারণায়। ‘খোলা হাওয়া’ চলচ্চিত্রে ছোটো একটি দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন ইন্দ্রাশিস। সেই পরিচয়। তারপর সেই পরিচয়ই জড়িয়ে গেল এই সিনেমায় যুগলবন্দিতে।

/১১

বরুণ চন্দ জানালেন, ইন্দ্রাশিস আচার্যের ছবিতে চমকপ্রদ একটি টেকনিক দেখা যায়। একটি বাড়ির দোতলা বারান্দা। সেখানে একটা দরজা খুলছে, আবার বন্ধ হচ্ছে। দরজা দিয়ে একটি চরিত্র বেরিয়ে পাশের আরেকটি দরজায় কড়া নাড়ছে। অথচ এই গোটা সময়টা জুড়ে ক্যামেরা স্থির। “এখনকার হ্যান্ডহোল্ড ক্যামেরা কিংবা ট্রলি শটের দুনিয়ায় ভারতীয় চলচ্চিত্রে এই টেকনিক বিরল”, বলছিলেন বরুণ চন্দ।

১০/১১

অভিনেতা জয় সেনগুপ্তের কথায়, এই ছবি ইন্দ্রাশিস আচার্যের আত্মজীবনীর প্রতিফলন। একজন কর্পোরেট চাকুরের ব্যক্তিগত অস্বস্তি, দ্বন্দ্ব— একদিকে ছবি করার আকাঙ্ক্ষা, অন্যদিকে বাঁধা ধরা জীবন— এর মাঝে দু-নৌকায় পা দিয়ে চলতে না পারা একটা মানুষের যন্ত্রণা অন্য প্রতিমা নিয়ে উঠে এসেছিল ‘বিলু রাক্ষস’-এ।

১১/১১

মুক্তি পাওয়ার পর টানা পাঁচ সপ্তাহ নন্দনে চলেছিল ‘বিলু রাক্ষস’। পরবর্তীতে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে এই ছবি দেখেছেন বহু মানুষ। তারপরেও মুক্তির দীর্ঘ পাঁচ বছর পেরিয়ে, এই ছবির স্বাদ নিতে নন্দনে ভিড় জমান দর্শকরা। উপচে ওঠে প্রেক্ষাগৃহ। ‘বিলু রাক্ষস’-এর দ্বিতীয় অধ্যায় আসবে কি আসবে না, তা জানা নেই। তবে এই ছবির স্মৃতি যে এখনও বাংলা চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে বহমান, তার সাক্ষী থেকে গেল বৃহস্পতিবারের নন্দন… ছবি ঋণঃ হিয়া ভূঁইয়া

Powered by Froala Editor

Latest News See More