বাঙালি গবেষককে স্যালুট বিল গেটসের, কী লিখলেন তিনি?

মাত্র বছর তিনেক আগের কথা। মায়ানমার সরকারের রোহিঙ্গা ক্লিয়ারেন্স অপারেশনের ফলে ভিটেমাটি ছেড়ে বিদায় নিতে বাধ্য হন কয়েক লক্ষ মানুষ। সীমান্ত পেরিয়ে অনেকে এসে আশ্রয় নেন বাংলাদেশে। তারপর শুরু হল জীবন সংগ্রাম। আর এই লড়াইয়ে অন্যতম প্রতিপক্ষ পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী মহামারী। যার প্রকোপ এখনও চলছে। না, করোনা নয়। এই মহামারীর নাম কলেরা। প্রতি বছর পৃথিবীতে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হন। তার মধ্যে ১ লক্ষ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যান। আর এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা দেয় উদ্বাস্তু শিবিরেই। তবে রোহিঙ্গারা এই লড়াইয়ে পাশে পেলেন এক বন্ধুকে। যিনি নিজের সারা জীবনের গবেষণার শিক্ষা দিয়ে আগলে রেখেছেন তাঁদের। আর সেই বন্ধুটির নাম ফিরদৌসী কাদরী।

১৯৫১ সালে জন্ম ফিরদৌসী কাদরীর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণ-রসায়ন ও অণুজীববিদ্যায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৭৭ সালে। এর মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে কলেরা মহামারীর বর্তমান পর্যায়টি। দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতিকে চোখের সামনে দেখে তার ব্যাপকতা বুঝতে পারেন ড. ফিরদৌসী। ১৯৮০ সালে লিভারপুল থেকে পিএইচডি করে ফিরে গবেষণা শুরু করেন ঢাকা আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রে। এখান থেকেই একসময় তৈরি হয়েছিল ওরস্যালাইনের ব্যবহার। তবে ড. ফিরদৌসী গুরুত্ব দেন কলেরার টিকা তৈরির বিষয়েই। ইতিমধ্যে ডকোরাল ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার খরচ সামলানোর মতো ক্ষমতা সাধারণ মানুষের নেই। ড. ফিরদৌসী তাই স্বল্প খরচে তৈরি করলেন একটি প্রতিষেধক। যার নাম শ্যাঙ্কল। ২৫ বছরের গবেষণার ফলে এই টিকা প্রস্তুত করতে পেরেছেন তিনি। আর ২০১১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও অনুমোদন পেয়েছে শ্যাঙ্কল।

কলেরা ছাড়াও তিনি ইটিইসি, টাইফয়েড, হেলিকোব্যাকটের পলরি, রোটা ভাইরাস প্রভৃতির উপরেও গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন। আর সেইসঙ্গে হতদরিদ্র মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের টিকাকরণের দায়িত্বও নিয়েছেন। সম্প্রতি বিল গেটসের নিজস্ব ব্লগ ‘গেটস নোটস’-এ উঠে এসেছে ফিরদৌসী কাদরীর নাম। চলতি বছরের শুরুতেই জাতিপুঞ্জ তাঁকে ল’রিয়েল সম্মান জানিয়েছে। আর অবশ্যই পেয়েছেন অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা। যদিও ড. ফিরদৌসী মনে করেন দারিদ্র্য, অশিক্ষা আর অনাহার দূর না হলে কলেরার নিরাময় সম্ভব নয়। তবে যতদিন সেটা সম্ভব না হচ্ছে, ততদিন টিকাকরণের উপরেই ভরসা রাখতে হবে। আর সেই টিকা যাতে সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে পারে, নিশ্চিত করতে হবে সেটাও।

Powered by Froala Editor

Latest News See More