পরনে সাদা শার্ট, নীল স্কার্ট, পিঠে ব্যাগ। উঁচু-নিচু মাটির রাস্তা দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে স্কুলে চলেছে ছোট্ট এক কিশোরী। না, খেলার ছলে নয় লাফানো নয়। একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে আদতে একটি পা নেই তার। কিছুদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল এই দৃশ্য। সরব হয়েছিলেন বহু মানুষ। এবার এই ভিডিও-র দৌলতেই কৃত্রিম অঙ্গ (Prosthetic Limb) পেল বিহারের (Bihar) বছর দশেকের সীমা কুমারী (Seema Kumari)।
বছর দুয়েক আগের কথা। গ্রামে পথদুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল ফতেহপুরের কিশোরীটি। পায়ের ওপর দিয়ে চলে গিয়েছিল আস্ত ট্রাক্টর। প্রাথমিক চিকিৎসায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছিল ঠিকই, তবে ক্ষতস্থান থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। অঙ্গব্যবচ্ছেদ না করলে প্রাণ সংশয় দেখা দিতে পারে তার, জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। ফলে বাধ্য হয়েই কেটে বাদ দিতে হয় তার বাঁ পা।
দুর্ঘটনার পা হারালেও, আত্মবিশ্বাসে এতটুকু ঘাটতি দেখা দেয়নি সীমার। বরং, এক পায়েই চলার অভ্যাস শুরু করে ছোট্ট কিশোরী। এক্কা-দোক্কা খেলার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে পথ চলার কৌশল আয়ত্ত করে সে। সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে ফিরে আসে পড়াশোনার জগতে। অবশ্য প্রথমে ছোট্ট মেয়েকে এই অবস্থায় স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি তার বাবা-মা। দুজনেই যে পরিযায়ী শ্রমিক। মেয়েকে প্রতিদিন স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় কোথায় তাদের? আর এভাবে তাকে একাও যে ছেড়ে দেওয়া যায় না।
তবে শেষ পর্যন্ত সীমার জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছিলেন তার বাবা মা। পরিবারের থেকে স্কুলে যাওয়ার অনুমতি আদায় করেই ছেড়েছিলেন ছোট্ট কিশোরী। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকেই স্কুলের গণ্ডিতে পা রাখে সীমা। তবে স্কুলে যাওয়ার জন্য কারোর কাছেই সাহায্য নেয়নি সে। প্রতিদিন প্রায় এক কিলোমিটার পথ লাফিয়ে লাফিয়েই অতিক্রম করত বিহারের ছোট্ট কিশোরীটি।
কিছুদিন আগে তাঁর এই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পরই, সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন অভিনেতা সোনু সুদ। প্রস্থেটিক পা দান করার জন্য অনুসন্ধান শুরু করেছিলেন সীমার। আর তারপরেই নড়ে-চড়ে বসে বিহারের রাজ্য শিক্ষা দপ্তর। বিহার শিক্ষা প্রকল্প কাউন্সিলের উদ্যোগে কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয় সীমার পা-এ। সরকারের এই সাহায্য পেয়ে খুশি ছোট্ট কিশোরী। স্বপ্ন একদিন শিক্ষিকা হবে সেও। এবার সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে যাওয়ার পালা…
Powered by Froala Editor