ভাসমান নৌকাতেই চলছে পড়াশোনা, বন্যাবিধ্বস্ত বিহারে অভিনব পাঠশালা

করোনা অতিমারীর জেরে স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছে আগেই। এর মধ্যে দেশজুড়ে স্কুল খোলার প্রক্রিয়া শুরু হলেও বিহারের(Bihar) কাটিহার জেলায় আপাতত সেই সম্ভাবনা নেই। কারণ স্কুলবাড়িগুলোই রয়েছে জলের তলায়। প্রায় ৬ মাস আগে বিহারে বন্যা শুরু হয়েছিল। এখনও বহু জায়গায় জল নামেনি। এই পরিস্থিতিতে যাতে পড়ুয়াদের পঠনপাঠন থমকে না থাকে, তাই এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় যুবকরা। স্কুল নেই তো কী হয়েছে? পড়াশোনা চলছে নৌকোর মধ্যেই। তিনজন যুবক মিলে এভাবেই ৪০ জন পড়ুয়াকে পড়াচ্ছেন রোজ। আর নৌকোর উপর তৈরি এই স্কুলের নাম তাঁরা রেখেছেন ‘নাও কি পাঠশালা’(Naav Ki Pathshala)।

পড়ুয়াদের কেউ সবে প্রথম শ্রেণির পড়াশোনা শুরু করেছে। আবার ১২ জন পড়ুয়া আগামী বছর দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা দেবে। তাই তাদের সিলেবাস শেষ করার তাগিদটা স্বাভাবিকভাবেই একটু বেশি। একসঙ্গে প্রতিটা দিক খেয়াল রেখে চলেছেন রবীন্দ্র, পঙ্কজ এবং কুন্দন। প্রত্যেকেই কোনো না কোনো বিষয়ে স্নাতকোত্তর স্তর অবধি পড়াশোনা করেছেন। এরপর শিক্ষকতাকেই বেছে নিয়েছেন, তবে পেশা হিসাবে নয়। দীর্ঘদিন ধরেই মনিহারী এলাকার পড়ুয়াদের জন্য একটি অবৈতনিক কোচিং সেন্টার চালাচ্ছেন তাঁরা। লকডাউনে সেই কোচিং সেন্টারের দায়িত্ব বেড়েছিল অনেকটাই। আর এবার বন্যা পরিস্থিতিতে নৌকোর মধ্যেই শুরু হল স্কুল।

স্থির নৌকোয় এতজন পড়ুয়াকে নিয়ে বসে থাকা সম্ভব নয়, তাই সঙ্গে একজন মাঝিও থাকেন সবসময়। একজন করে শিক্ষক ব্ল্যাকবোর্ড নিয়ে নৌকোয় ওঠেন, সঙ্গে থাকেন পড়ুয়ারা। প্রতিদিন তিনটি করে ক্লাস শেষ করে আবার যে যার আস্তানায় ফিরে যায়। তবে পড়ুয়াদের ঠিকানাও এখন ত্রাণ শিবিরে। বন্যায় বাড়িঘর থেকে শুরু করে বইপত্র সবই ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় প্রতিদিনের ক্লাসের বাইরে পড়াশোনা সম্ভব নয় কারোরই।

ইতিমধ্যে নাও কি পাঠশালার খবর প্রচারিত হতেই স্থানীয় প্রশাসন থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে তিন যুবকের সঙ্গে। তাঁদের কাজের প্রশংসা করলেও পড়ুয়াদের নিরাপত্তার কথা ভেবে নৌকোয় স্কুল বন্ধ করার কথা জানিয়েছে প্রশাসন। উদ্যোক্তারাও বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত। একসঙ্গে এতজন পড়ুয়াকে নিয়ে নৌকোয় চাপলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু গোটা মহকুমা যখন জলের তলায়, তখন আর বিকল্প উপায়ও যে নেই। এও এক বেঁচে থাকার লড়াই। যে বেঁচে থাকার চাহিদা শুধুই খাদ্য-বস্ত্র আর বাসস্থান নয়, তার সঙ্গে শিক্ষাও এক মৌলিক চাহিদা।

আরও পড়ুন
মাটির দেওয়ালই ব্ল্যাকবোর্ড, গোটা গ্রামকেই ক্লাসঘর বানিয়ে নজির শিক্ষকের

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
‘সন্তানকে শিক্ষিত সাইকোপ্যাথ বানাবেন না’, আর্জি হলোকাস্ট-ফেরত শিক্ষকের

Latest News See More