বাড়িতেই ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করছেন বিহারের পরিযায়ী শ্রমিকরা

করোনা ভাইরাসের কমবেশি সকলের রোজগারেই থাবা বসিয়েছে। তবে সংক্রমণের আবহ সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে পরিযায়ী শ্রমিকদের। তাঁদের ভোগান্তি ছবি সামনে এসেছিল লকডাউনের প্রথম থেকেই। একদিকে যেমন উপার্জন বন্ধ হয়েছিল। আরেকদিকে ভিনরাজ্যে থাকাও দুষ্কর হয়ে উঠেছিল তাঁদের পক্ষে। অনেকটা লড়াই করেই ফিরতে হয়েছিল নিজের বসতবাড়িতে। অনেকের লড়াই শেষ হয়ে গিয়েছিল রাস্তাতেই। সেই ছবিও দেখেছি আমরা। এবার করোনা পরিস্থিতিতে নিজেদের বাড়িতে থেকেই অর্থনীতির সঙ্গে লড়াই শুরু করলেন বিহারের শ্রমিকরা।

অকুস্থল বিহারের পশ্চিম চম্পারণ জেলা। এই জেলার বেশ কিছু গ্রাম থেকেই একদল শ্রমিক কাজ করতেন কাশ্মীরে। তাঁদের ছাড়া বাইশ গজের যুদ্ধ অচল। অনন্তনাগ, আওয়ান্তিপুরা কিংবা কাজিগুন্ডের বিভিন্ন ফ্যাক্টরিতে তৈরি করতেন ক্রিকেট ব্যাট। কাশ্মীরে তৈরি ক্রিকেট ব্যাটের খ্যাতি এবং গুণমান সম্পর্কে নতুন কিছুই বলার নেই। তবে করোনার আবহে আর কাশ্মীরে না ফিরে গিয়ে, নিজেদের গ্রামেই ব্যাট তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন চম্পারণের শ্রমিকরা।

পশ্চিম চম্পারণের সহোদ্রা গ্রামেই জড়ো হয়েছেন এমন ১০ জন শ্রমিক। তৈরি হয়েছে ছোট্ট দল। নিজেদের দক্ষতা এবং এত বছরের অভিজ্ঞতাকে সঙ্গে নিয়েই যাত্রা শুরু করেছেন গত মাস থেকে। এখনও অবধি তৈরি করেছেন ৫০টিরও বেশি ব্যাট। 

এই ব্যাট তৈরি হয় মূলত পপলার গাছের কাঠ থেকে। গ্রামেই রয়েছে সেই গাছ। ফলে কাঠ পেতে অসুবিধা হচ্ছে না খুব একটা। কিন্তু মূল বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশ এবং মৌসুমি জলবায়ু। ফলে শুকনো কাঠ পেতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে তাঁদের। পাশাপাশি উন্নতমানের যন্ত্রাদির অভাবও অনেক ধীর করে দিয়েছে তাঁদের গতি। এক শ্রমিক জানাচ্ছেন, কাশ্মীরে দিনে প্রায় ১২টির বেশি ব্যাট তৈরি করা হত। এখানে সেই সংখ্যাটি বহু কম। কারণ ব্যাট তৈরির সময় হিসাব, বিবেচনা, ব্যাটের স্ট্রোক এবং ওজনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জিনিস খেয়াল রাখতে হয়। যন্ত্রের অভাবে তা সম্পূর্ণ নিজেদের বুঝেই করতে হচ্ছে।

আরও পড়ুন
পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা তুলে ধরতে হাতিয়ার র‍্যাপ, ডাক এল ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকেও

কথায় আছে, হাজার চেষ্টা করলেও শিল্পিসত্তাকে দমিয়ে রাখা যায় না। তেমনই পড়ে থাকছে না তাঁদের তৈরি ব্যাট। প্রথমে বিক্রিতে অসুবিধা হলেও, এখন তাঁদের বানানো ব্যাট রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছে এলাকার ক্রিকেটপ্রেমী যুবসমাজে। মাত্র ৮০০ টাকার ব্যাটের মান দেখে বিস্মিত এলাকার তরুণরাও। 

আরও পড়ুন
পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন বাবা-মেয়ে, মানবিক দৃশ্য গোয়ায়

সদ্যোজাত এই কারখানার আর্থিক সাহায্যের জন্য তাঁরা দ্বারস্থ হয়েছিলেন প্রশাসনের। ভরসা দিয়েছেন গৌহানা ব্লকের সার্কেল অফিসার। তবে আনলক পর্বের শুরু থেকেই ‘উপেক্ষিত’ পরিযায়ী শ্রমিকদেরই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা শুরু করেছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের কল-কারখানাগুলি। জীবন নির্বাহের অসহায়তার মুখে পড়ে অনেকে ফিরেও গিয়েছিলেন ভিনরাজ্যে কাজ করতে। বিহারের এই শ্রমিকরাই এবার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করে দেখালেন ‘স্বার্থপর’ সমাজ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। 

আরও পড়ুন
পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে দেশের মহিলা হকি প্লেয়াররা, জোগাড় করলেন ২০ লক্ষ টাকা

Powered by Froala Editor

Latest News See More