সময় লেগেছিল ২২ বছর। তবে একা হাতেই আস্ত পাহাড় কেটে রাস্তা বানিয়ে ফেলেছিলেন মাউন্টেন ম্যান দশরথ মাঝি। তার পরেও কি আর বলা যায় অসম্ভবকে জয় করা যায় না? এবার তাঁর থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে একা হাতে সমগ্র ‘অরণ্য’ তৈরি করে ফেললেন বিহারের সত্যেন্দ্র মাঝি। ফল্গু নদীর তীরে অনাবাদি জমিতে ১০ হাজার গাছ লাগিয়ে বিশাল পেয়ারা বাগান বানালেন তিনি।
বিহারের গয়া জেলার ইমালিয়াচক গ্রামের বাসিন্দা সত্যেন্দ্র মাঝি। বছর পনেরো আগে শুরু হয়েছিল তাঁর এই ‘অভিযান’। আর এই উদ্যোগের পিছনে ছিলেন স্বয়ং দশরথ মাঝি। তখন ক্রমাগত বেড়ে চলেছে নদীর চর। সত্যেন্দ্রবাবুর বাড়িতে গিয়েই তিনি অনুরোধ করেছিলেন ফল্গু নদীর তীরবর্তী বন্ধ্যা জমিতে একটি গাছ লাগানোর জন্য। সেই সাক্ষাৎকারই বদলে দিয়েছিল সত্যেন্দ্রবাবুর জীবন। একটি নয়, নিজেই ১০ হাজার বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা করেন তিনি। সম্প্রতি সেই লক্ষ্যমাত্রাতে সফলভাবে পৌঁছালেন তিনি।
তবে এই কাজ একাবারেই সহজ ছিল না। কারণ, এক কথায় বলা যায় অঞ্চলটি অনেকটা মরুভূমিই। যতদূর চোখ যায় শুধু বালি আর বালি। অন্য জায়গা থেকে সামান্য মাটি এনে শুরু হয়েছিল বৃক্ষরোপণের প্রক্রিয়া। গাছে জল দেওয়ার জন্য বহুদূর থেকে পাত্রে করে বয়ে আনতে হত জল। তাছাড়া ছিল বিভিন্ন তৃণভোজী প্রাণীর অনুপ্রবেশের ঘটনাও। তাদের আটকাতে বাগান ঘিরে কাঁটাগাছ রোপণ করেন সত্যেন্দ্র মাঝি। একদিকে যেমন তা সুরক্ষা দিত গাছের চারাদের, তেমনই ধরে রাখত বালুকাময় মাটির জলকেও।
মগধ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেছিলেন সত্যেন্দ্রবাবু। তবে পরিবেশ সংরক্ষণে শুরু থেকেই সচেতন ছিলেন তিনি। তাঁর কথা জানতে পেরে নিজেই অনুরোধ করতে এগিয়ে এসেছিলেন দশরথ মাঝি। সম্প্রতি তাঁর এই সাফল্যের পর বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার শিশু সুরক্ষা কমিশনের সদস্য হিসাবে ঘোষণা করেন তাঁর নাম।
এখনও পর্যন্ত সম্পূর্ণ একা হাতেই এই বাগানের পরিচর্যা চালিয়ে যাচ্ছেন সত্যেন্দ্র মাঝি। সন্তানস্নেহেই যেন পালন করছেন তাঁদের। পাশাপাশি এই বাগানের পেয়ার বিক্রি করেই সংসার চালান তিনি। অন্যদিকে তাঁর পরিচর্যায় প্রাণ ফিরে পাচ্ছে ফল্গুর এই ‘মৃত’ প্রান্তর। তবে মনে প্রাণে তাঁর বিশ্বাস, একার এই উদ্যোগে খুব কিছু পার্থক্য গড়ে উঠবে না। পরিবেশকে বদলাতে হলে, সুস্থ রাখতে হলে এমন উদ্যোগে এগিয়ে আসতে হবে সারা দেশের মানুষকে…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
গাছেদের শরীরেও আছে চৌম্বকক্ষেত্র, সন্ধান দিলেন জার্মানির বিজ্ঞানীরা