৩ মাসে ৬০ শতাংশ মানুষের টিকাকরণ, ভুটানের সাফল্যে অবাক বিশ্ব

ভারতের প্রতিবেশী দেশ ভুটান। হিমালয়ের বুকে ছোট্ট দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে মাত্র কয়েক বছর আগে। তবে আজও তার বাস্তবতা যেন কয়েক শতক পিছিয়ে আছে। দুর্গম পাহাড়ি উপত্যকা দিয়ে মোটরগাড়ি চলে না অধিকাংশ জায়গাতেই। এমনকি আধুনিকতার প্রাথমিক শর্ত এ শিক্ষাব্যবস্থা, তাও ঠিকভাবে গড়ে ওঠেনি দেশজুড়ে। এক কথায় উন্নয়ন সেখানে থমকে আছে। তবে এত কথা বলার কারণ একটাই। এই বাস্তবতার মধ্যেও ভুটানে করোনা টিকাকরণ কর্মসূচি রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছে। এর মধ্যেই দেশের ৬০ শতাংশ মানুষকে করোনার প্রতিষেধক দেওয়া সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছে ভুটান সরকার।

প্রতিষেধক আবিষ্কারের অনেক আগে থেকেই এর বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়েছিল আমেরিকায়। আজও জাপানের মানুষ প্রতিষেধক নিতে ভয় পাচ্ছেন। কেউ কেউ ভাবছেন প্রতিষেধক নিলে শরীরের স্বাভাবিক অনাক্রম্যতা নষ্ট হবে। পৃথিবীর তথাকথিত উন্নত দেশগুলিতেই মানুষ এখনও কুসংস্কার আর অপবিজ্ঞানের ছায়া থেকে মুক্ত হতে পারেননি। অথচ ছোট্ট দেশ ভুটান যেন সত্যিই অবাক করে। দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে হেলিকপ্টারে চেপেই পৌঁছে যাচ্ছেন সেনাবাহিনী এবং চিকিৎসকরা। এক একটি জায়গা চিহ্নিত করে চলছে টিকাকরণ কর্মসূচি। এত দ্রুত কাজ করার জন্য প্রশাসনের প্রশংসা পাওয়া উচিত অবশ্যই। কিন্তু তার থেকেও অবাক করেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা। তথাকথিত অশিক্ষিত মানুষরাও কেউ প্রতিষেধক নিতে আপত্তি জানাননি। ভুটানের এই দৃশ্য যেন আধুনিকতার সংজ্ঞাকেই নতুন করে পড়তে শেখাচ্ছে।

তবে এই সফল টিকাকরণ কর্মসূচির পিছনের প্রস্তুতিটা কিন্তু সহজ ছিল না। মহামারী পরিস্থিতিতে একটু একটু করে সেই সচেতনতা গড়ে তোলা হয়েছে। তবে কোনো কেন্দ্রীয় কর্মসূচি নিয়ে এই বিরাট কাজে সাফল্য অর্জন করা যেত না, সেটা বুঝতে পেরেছিল প্রশাসন। আর তাই বিভিন্ন অঞ্চলকে লক্ষ্য করে ছোটো ছোটো সচেতনতা শিবির গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা। কোথাও সেখানকারই শিক্ষিত মানুষদের নিয়ে, কোথাও বা স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের নিয়ে তৈরি হয়েছিল প্রচার কর্মসূচি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে বোঝাতে হয়েছে ভ্যাকসিনের গুরুত্ব। ভ্যাকসিন নিলে যে মৃত্যু হয় না, বরং নিশ্চিত মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি কমে যায়, সেটাই বুঝিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা।

মাত্র তিন মাসের মধ্যে ভুটানের ৬০ শতাংশ মানুষের টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে এর মধ্যেই ভারত থেকে পৌঁছনো কোভিশিল্ডের ভায়াল সমস্ত শেষ হয়ে গিয়েছে। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে অবশ্য অ্যাস্ট্রা-জেনেকা ভায়ালের একটি লট ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যেই ১০০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দেওয়া যে অসম্ভব হবে না, সে-বিষয়ে আশাবাদী ভুটান সরকার।

আরও পড়ুন
করোনাকালে গৃহহীন ইংল্যান্ডের ৭ লক্ষ পরিবার!

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় না মস্তিষ্ক, প্রমাণ দিলেন গবেষকরা