ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিল ভুটান সরকার। এশিয়ার ক্ষুদ্রতম দেশে এবার থেকে বৈধতা পেতে চলেছে সমলিঙ্গ সম্পর্ক। বৃহস্পতিবার ভুটানের দুই সংসদের যৌথ বৈঠকে অনুমোদিত হয় নতুন বিল। ভুটানের দণ্ডবিধির ২১৩ এবং ২১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী সমকামিতাকে ‘অপ্রকৃতস্থ যৌনতা’ হিসাবেই বিবেচিত হত ভুটানে। সেই ধারাই সংশোধন হতে চলেছে এবার। প্রত্যাহার করা হচ্ছে সমকামিতা বিরোধী সমস্ত বিধিনিষেধ। ভুটানে সমকামিতাকে ‘অপরাধ’ বলে বিবেচিত হবে না আর।
উভয় সংসদের ৬৯ সদস্যের মধ্যে ৬৩ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন যৌথ বৈঠকে। তাঁদের মধ্যে প্রত্যেকেই সবুজ সংকেত দিয়েছেন আইন সংশোধনের। তবে যৌথ সম্মেলনের চেয়ারপারসন উগেন ওয়াংড়ি, সাক্ষর করলেও এই বিল আইন হওয়ার জন্য অনুমোদন পেতে হবে ভুটানের রাজার থেকে। সম্প্রতি সেই আবেদন নিয়েই রাজদরবারে হাজির হয়েছেন সাংসদরা।
কলকাতার অলাভজনক সংস্থা ‘প্রান্তকথা’র কর্মকর্তা বাপ্পাদিত্য মুখোপাধ্যায় জানান, “দঃ পূর্ব এশিয়ায় প্রান্তিক লিঙ্গ এবং যৌনতার মানুষদের মানবাধিকারের লড়াইয়ের আজ এক ঐতিহাসিক দিন। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বরই দীর্ঘ আইনি ও সামাজিক লড়াইয়ের পরেও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যৌন অভিব্যক্তির নিরিখে এলজিবিটির সম্প্রদায়কে অপরাধী বলে দেগে দিয়েছিল। সেই একই দিনে ঐতিহাসিক জয় এল ভুটানে। এই আন্দোলনের ইতিহাস অবশ্যপাঠ্য।”
"আজকে ভুটানের মতো দেশে তাদের সরকার এবং জুডিসিয়ারি সিস্টেম এটা ভেবেছে, সেটাই একটা বড় পাওয়া। এর পর থেকে সমকামীরা তাঁদের ডিগনিফায়েড লাইফটা লিড করতে পারবে আরও বেটার চান্সে। এটাই তো হওয়া দরকার ছিল। কেন না আমরা বলছি মানবাধিকারের কথা। মানবাধিকার দিবস পালন করছি আমরা। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে একজন মানবের অধিকারকেই হরণ করছি। ভারতেও সুপ্রিম কোর্ট দেরিতে হলেও সেটা বুঝেছে, রায় দিয়েছে। তবে সেটাকে আরও একটু পাকাপোক্ত করা উচিত। ম্যারেজ রাইটটাও দেওয়া উচিত এবং অ্যাডাপশন রাইটসটাও দিতে হবে। আমি মনে করি ভুটান যে রায়টা দিয়েছে, যে জায়গাটা তৈরি করতে পেরেছে সেটা পুরো বিশ্বকে একটা আলাদা রাস্তা দেখাবে", বললেন অ্যাসোসিয়েশন অফ ট্রান্সজেন্ডার এন্ড হিজরা ইন বেঙ্গলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যা রঞ্জিতা সিনহা।
আরও পড়ুন
সমকামিতার ‘অপরাধে’ অকথ্য নির্যাতন, মিশরের পুলিশের নিন্দায় সরব বিশ্ব
২০১৮ সালে ভারতবর্ষ বৈধতা দিয়েছিল সমকামিতায়। অন্যদিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালও চলতি বছর থেকেই জনসংখ্যা গণনায় যুক্ত করছে সমকামীদের। তবে এদিক থেকে এতদিন পিছিয়ে ছিল ভুটান। এবার অন্য প্রতিবেশী দেশের মতোই প্রগতিশীল মানসিকতার পথেই হাঁটল ৮ লক্ষ জনবসতির ছোট্ট হিমালয়ান দেশটিও। হ্যাপিনেস ইনডেক্সে অনেকটাই এগিয়ে থাকলেও সমকামীরা এতদিন বঞ্চিত ছিলেন ন্যায্য অধিকার থেকে। এবার মুছে যেতে চলেছে সেই বৈষম্যতাও। পাশাপাশি এলজিবিটি সম্প্রদায়ের মানুষরা শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সুবিধা পাবেন বলে মতামত বিশেষজ্ঞদের...
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ধর্মীয় বিশ্বাসেরও ঊর্ধ্বে ব্যক্তিস্বাধীনতা, সমকামিতা-প্রসঙ্গে রায় কানাডার আদালতের