মাত্র কয়েকদিন আগের কথা। বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির একটি ঘটনা সবার নজরে আসে। কারণ, ছাত্র বিক্ষোভ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত ও ধর্মবিজ্ঞান বিভাগে একজন অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছেন। ধর্মপরিচয়ে তিনি মুসলিম। আর এরই ‘প্রতিবাদে’ বিক্ষোভ করছেন পড়ুয়াদের একাংশ। এই বিক্ষোভ যে অসঙ্গত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেই শিক্ষক, ফিরোজ খান ইতিমধ্যেই ছেড়ে গেছেন বেনারস। আর এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতেই, বেশ কিছু গবেষক এবং ঐতিহাসিক অন্তত একবার ইতিহাসের দিকে চোখ ফেরাতে বলছেন। চোখ ফেরাতে বলেছেন বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটির শুরুর সময়ের দিকে। যেখানে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের খাতে টাকা দিয়েছিলেন স্বয়ং হায়দ্রাবাদের ‘মুসলিম’ নিজাম।
১৯১৬ সালে বেনারসে মদন মোহন মালব্য এবং অ্যানি বেসান্তের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘কেন্দ্রীয় হিন্দু কলেজ’। কালে কালে সেটাই পরিচিত হয় ‘বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি’ নামে। স্বাধীনতার আন্দোলন থেকে আজকের যুগ— সব সময়ই ভারতের অন্যতম প্রধান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তকমা পেয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু শুরুর সময়টা এত মসৃণ ছিল না। মূল সমস্যা ছিল অর্থের। সেই সময়, দেশীয় শিক্ষার উন্নতির স্বার্থে অনেকেই মুক্ত হস্তে দান করেছিলেন এখানে। দান করেছিলেন হায়দ্রাবাদের তৎকালীন নিজাম মীর ওসমান আলি খানও। ১৯৩৯ সালে তৎকালীন মূল্যে নগদ ১ লক্ষ টাকা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির স্বার্থে দিয়েছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত, পণ্ডিত মদনমোহন মালব্যের অনুরোধেই এই দান করেছিলেন নিজাম।
তখনকার সময়, কোনও ধর্মের কথা কারোর মাথায় এসেছিল কিনা, জানা যায় না। ১৯৩৯ সালে টাকা দেওয়ার সময় নিজামের ধর্ম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল কিনা, বিক্ষোভ হয়েছিল কিনা, সেটাও অজানা ইতিহাসের। কিন্তু বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি গড়ে ওঠার পেছনে নিজামও যে যুক্ত ছিলেন প্রবলভাবে, সেটা অস্বীকার করার কোনও জায়গা নেই। শিক্ষকের কাজ শিক্ষা দেওয়া। তাঁর মুল্যায়ন সেইখানেই হওয়া উচিত বলে বলছেন অনেকে। সেখানে এখন উঠে আসছে ধর্মের বেড়া। তাহলে কি এবার নিজামকেও অস্বীকার করা হবে?