প্রতিবেশী দেশ ছিল ভারত-অস্ট্রেলিয়া, প্রমাণ দিল সদ্য-আবিষ্কৃত ভীমবেটকার জীবাশ্ম

ভূতাত্ত্বিকদের মতে প্রাথমিক অবস্থায় পৃথিবীতে অস্তিত্ব ছিল একটি মাত্র বৃহৎ মহাদেশের। পরে সেই ‘প্যানজিয়া’ মহাদেশ টেকটনিক পাতের গতির জন্য জন্ম নেয় সপ্ত মহাদেশ। তাত্ত্বিকভাবে প্রতিটি মহাদেশকে পাশাপাশি জুড়ে দিলে অনেকটাই ফুটে ওঠে সেই অখণ্ড চিত্র। এবার এই তত্ত্বকে সমর্থন জানাল ভারতের ভীমবেটকার সাম্প্রতিক আবিষ্কার। সদ্য খুঁজে পাওয়া জীবাশ্ম উস্কে দিল অস্ট্রেলিয়া আসলে ছিল ভারতেরই প্রতিবেশী।

মাত্র কয়েকদিন আগের ঘটনা। ভীমবেটকার গুহাচিত্র গবেষণার সময় দুর্ঘটনাবশতই একটি জীবাশ্ম আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্রামই নিচ্ছেলেন গবেষক গ্রেগরি জে রেটাল্যাকের দল। গুহাচিত্রের ফাঁকে সবুজাভ একটি পাথর দেখে তার নমুনা সংগ্রহ করেন তাঁরা। পরে পরীক্ষা করতেই ভেঙে যায় ভুল। আসলে এই নমুনাই ছিল ডিকিনসোনিয়া নামের একটি প্রজাতির জীবাশ্ম। বিশেষভাবে বলতে গেলে পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রাণী-জীবাশ্মই এটি। বয়স আনুমানিক ৫৭ কোটি বছর।

ভারত ছাড়াও এই জীবের জীবাশ্ম এর আগে পাওয়া গেছে রাশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ায়। অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্ত ডিকেনসোনিয়ার প্রাচীনতম নিদর্শনের বয়স আনুমানিক ৫৫.৫ কোটি বছর। অর্থাৎ ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ায় প্রাপ্ত দুটি নমুনাই এডিয়াক্যারন যুগের। ধরে নেওয়া যায় একই সময়ে ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ায় বিচরণ করত এই প্রাণীটি। কাজেই প্রাথমিকভাবেই প্রসঙ্গ উঠেছিল, এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়া কি তবে অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল সুদূর অতীতে?

সম্প্রতি আরও বেশ কিছু তথ্য এই সম্ভাবনাকেই জোরালোভাবে সমর্থন জানাল। ঠিক কেমন? সহজ ভাষায় বলতে গেলে প্রথমত অস্ট্রেলিয়ায় যে দুটি প্রজাতির ডিকেনসোনিয়ার জীবাশ্ম পাওয়া যায়, ভারতেও পাওয়া গেছে তারই মধ্যে একটির জীবাশ্ম। উভয়ের ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত ক্যারাপাস এবং দেহের কঙ্কাল। অন্যদিকে ভীমবেটকার এই জীবাশ্মের শিলার আণবিক গঠন হুবহু এক অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে। দুটিই রনস্লে কোয়ার্জাইটের অনুরূপ। মধ্যপ্রদেশে সাধারণত মাইহার বেলেপাথরের আধিক্য দেখা যায় জীবাশ্ম শিলার ক্ষেত্রে। তবে কোয়ার্জের জীবাশ্ম প্রমাণ দিচ্ছে, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার পরিবেশ ছিল একই রকমের। ভারতকে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিবেশী হিসাবে ধরে নেওয়া হলে যা একমাত্র হতে পারে।

আরও পড়ুন
২২৪ বছর আগে প্রচলন ভ্যালেন্টাইন কার্ডের, প্রাচীনতম নমুনায় লুকিয়ে অভিমানের গল্প

তবে এই রহস্য উন্মোচনের গবেষণা গতি পেলেও নতুন এক ধন্ধে গবেষকরা। তার কেন্দ্রবিন্দু ডিকেনসোনিয়াই। গবেষকদের নতুন অভিমত উঠে আসছে, এতদিন প্রাণী বলে গণনা করে আসা ডিকেনসোনিয়া আসলে একটি উদ্ভিদ। কারণ তার দেহকোষের সঙ্গে বেশ কিছু শৈবাল এবং ছত্রাকের মিল লক্ষ্য করেছেন গবেষকরা। তবে এখনও এই বিষয়ে নিশ্চিত নন কেউ-ই…

আরও পড়ুন
ভিমবেটকায় পৃথিবীর প্রাচীনতম প্রাণীর জীবাশ্মের সন্ধান, বয়স ৫৪০ মিলিয়ন বছর

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ওজনে প্রায় ৭৭ টন, পৃথিবীর বৃহত্তম ডাইনোসরের জীবাশ্ম মিলল আর্জেন্টিনায়

More From Author See More