ব্রিটিশদের হাত ধরেই হুগলি নদীর দুই তীরে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য পাটকল। পরে স্বদেশি যুগে তার সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। এসবই ক্রমশ ইতিহাস হয়ে যাচ্ছে। বিগত ৩০ বছর ধরে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক পাটকল। আর সেই সূত্র ধরেই ইতিহাস হয়ে গেল আরও একটি প্রতিষ্ঠান। সোমবার ভাটপাড়া রিলায়েন্স জুটমিল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, তাঁদের পক্ষে আর কারখানা চালু রাখা সম্ভব নয়। শুধুই ইতিহাস নয়, এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কর্মহীন হয়ে পড়লেন ৪ হাজার কর্মচারী।
রিলায়েন্স জুটমিলের সঙ্গে আম্বানি গোষ্ঠীর কোনো সম্পর্ক নেই। ১৯০৬ সালে একেবারে স্বদেশি উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল এই কারখানা। তখন অবশ্য পাটকল ছিল বেশ লাভজনক ব্যবসা। পদ্মার তীর থেকে আসত কাঁচামাল। দেশভাগের পর কাঁচামাল আর সহজে মেলে না। ফলে তখন থেকেই ব্যবসায় মন্দা দেখা দিতে থাকে। এই সময় কতগুলি পাটকল যে বন্ধ হয়েছে, তার হিসাব রাখা সম্ভব নয়। রিলায়েন্স জুটমিল টিকে ছিল কোনোরকমে।
সোমবার কারখানা বন্ধের নোটিশ পাওয়ার পরেই কাঁচরাপাড়া রোড অবরোধ করেন শ্রমিকরা। পরে প্রশাসনের কাছ থেকে মৌখিক প্রতিশ্রুতি পেয়ে অবরোধ উঠে যায়। তবে মালিকপক্ষ পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, বিগত ১৪ বছর ধরে যেভাবে ক্রমাগত লোকসান চলছে, তাতে কারখানা চালানো সম্ভব নয়। এর আগে গতবছর এপ্রিলে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের চেষ্টা করা হয়। সেখানে পরিচালনা সংক্রান্ত বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যার মধ্যে অন্যতম বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল কর্মী ছাঁটাই। কিন্তু শ্রমিকরা সেই প্রস্তাব মানতে চাননি। অবশেষে কর্মহীন হয়ে পড়লেন প্রত্যেকেই। হুগলি পাট শিল্পাঞ্চলের বেশিরভাগ শ্রমিকই বংশপরম্পরায় একেকটি কারখানায় কাজ করেন। ফলে হঠাৎ কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প কর্মসংস্থান খুঁজে পাওয়াও বেশ কঠিন। এই অবস্থায় স্থানীয় প্রশাসন প্রতিশ্রুতি মতো সমস্যার জট কাটাতে পারে কিনা, সেদিকেই তাকিয়ে আছে ৪ হাজার কর্মচারীর পরিবার।
Powered by Froala Editor