অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বাই এবং পুনের বুকে আলিশান ফ্ল্যাট। দাম ভারতীয় মুদ্রায় কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা তো বটেই। তাছাড়াও রয়েছে প্রায় সাড়ে সাত কোটির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি। সবমিলিয়ে অনায়াসেই তিনি জায়গা করে নিতে পারেন মিলিয়নেয়ারদের তালিকায়। কিন্তু তাঁর এই বিপুল উপার্জনের উৎস কী? ভিক্ষা। শুনে চমকে ওঠাই স্বাভাবিক। ভিক্ষা করে আবার কোটিপতি হয়ে ওঠা যায় নাকি?
হ্যাঁ, যায় বইকি। যদি মাসিক উপার্জন ৬০-৭৫ হাজার টাকা হয়ে থাকে, তবে কোটি টাকা জমিয়ে ফেলা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। মুম্বাই-নীবাসি ভিক্ষুক ভরত জৈনের (Bharat Jain) গল্প এমনই আশ্চর্যকর, অবিশ্বাস্য। এই গল্প যেন হার মানায় ‘স্লামডগ মিলিয়নেয়ার’-এর কাহিনিকেও।
মুম্বাইয়ের বস্তিতে, চরম দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করেই বেড়ে ওঠা ভরতের। অর্থের অভাবে স্কুলের গণ্ডিও পেরোতে পারেননি তিনি। কাজ হারিয়েছিলেন বাবা। পরিবারের হাল ধরতে তাই পথে নামতে হয় তাঁকে। দিনে ১০-১২ ঘণ্টা বাণিজ্যনগরীর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াতেন তিনি। কখনও ভিক্ষা করতেন ছত্রপতি শিবাজি টার্মিনাসে, কখনও আবার ভিক্টোরিয়া টার্মিনাস কিংবা আজাদ ময়দানে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষের আনাগোনা এই অঞ্চলে। তাঁদের কেউ কেউ যেমন দৈনিক যাত্রী, তেমন দেশ-বিদেশের পর্যটকরাও আছেন সেই তালিকায়। কাজেই উপার্জন মন্দ হত না মোটেও। ক্রমশ আকাশচুম্বী হতে থাকে আয়ের পরিমাণ। বর্তমানে দিনে ৮-১০ ঘণ্টা ভিক্ষা করেই তাঁর আয় প্রায় ৭৫ হাজার টাকা।
তবে এখানেই থেমে থাকেননি ভরত। মুম্বাইয়ের বুকে দু-দুটি দোকানও রয়েছে তাঁর। থানের এই দোকান দুটিই ভাড়া দিয়ে রেখেছেন ভরত। মাস গেলে প্রতিটি দোকান থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা উপার্জন হয় তাঁর। এসবের বাইরে অংশীদারিত্বে ভিন্ন ব্যবসাও করেন তিনি। সবমিলিয়ে তাঁর মাসিক আয়ের অঙ্কটা অনায়াসেই ছাড়িয়ে যায় লক্ষের গণ্ডি।
তবে মজার বিষয় হল, মুম্বাইয়ে কোটি টাকার আলিশান ফ্ল্যাট থাকলেও, সে-বাড়িতে থাকেন না ভরত। বাবা, ভাই, স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকেন পারেলের ছোট্ট দু’কামরা বিশিষ্ট একটি অ্যাপার্টমেন্টে। রয়েছে মনিহারী পণ্যের ছোট্ট একটি দোকানও। অবশ্য সে-ব্যবসায় ভরতের ঝোঁক নেই কোনো, দোকানটি চালান তাঁর পরিবারের সদস্যরা। অন্যদিকে নিজে পড়াশোনা শেষ করার সুযোগ না-পেলেও, দুই সন্তানকেই ভরত পড়িয়েছেন কনভেন্ট স্কুলে। তাঁরাও ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠবেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে— সে-ব্যাপারেও সন্দেহ নেই কোনো।
বছর কয়েক আগে এক সংবাদমাধ্যমের সৌজন্যে প্রকাশ্যে এসেছিল ভরতের এই কাহিনি। যা রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিল গোটা ভারতজুড়ে। রিপোর্ট উঠে আসে তথ্য অনুযায়ী, ভারত তো বটেই, গোটা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক তিনিই। প্রশ্ন থেকে যায়, এতকিছুর পরেও কেন প্রতিদিন মুম্বাইয়ের পথে পথে ভিক্ষা করে বেড়ান ভরত, যেখানে ভিক্ষা না-করলেও তাঁর উপার্জন আশি হাজারেরও বেশি?
আসলে ভিক্ষাবৃত্তি এক প্রকার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তাঁর। ভরতের স্ত্রী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা জানিয়েছেন, পরিবার থেকে একাধিকবার আপত্তি করা সত্ত্বেও এই পেশা ছাড়তে নারাজ তিনি। বর্তমানে দেশের হাজার হাজার তরুণ চাকরির সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে পথে পথে। বেকারত্ব গ্রাস করছে স্নাতক থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদেরও। সেখানে দাঁড়িয়ে এক ব্যতিক্রমী চরিত্র ভরত।
Powered by Froala Editor