নবমী নিশি পেরিয়ে গেছে দুদিন আগেই। দশমীর বিষাদও যায়নি এখনও পুরোপুরি। যেতে আসতে, ফাঁকা মণ্ডপের দিকে অজান্তেই হয়ত চোখ চলে যাচ্ছে কারোর। তবে কিছু এমন জায়গা আছে, যেখানে দশমীর দিনে শুরু হয় পুজোর প্রস্তুতি। মা দুর্গাই অন্য রূপে পূজিত হচ্ছেন সেখানে। তবে দুর্গা নামে নয়, ভান্ডানি নামে।
মূলত উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ির আশেপাশের গ্রামে এই পুজো পালিত হয়। বলা যেতে পারে, একপ্রকার আঞ্চলিক উৎসব এটি, যা মূলত রাজবংশীরাই পালন করে থাকেন। কিন্তু দুর্গাপূজার সঙ্গে সম্পর্কিত, সেটাও অদ্ভুতভাবে। অনেক রকম গল্পকথা প্রচলিত রয়েছে এই পুজো নিয়ে। একটি বিশ্বাস অনুযায়ী, দশমীর রাতে কৈলাসে ফেরার পর দুর্গা আবার ফিরে আসেন মর্ত্যে। তখন স্থানীয় রাখালদের বাঘের ভয় দেখান দেবী। আর রাখালরা ভয় পেয়ে দেবীর পুজো করেন। ‘ভণ্ডামি’ করে পুজো নিয়েছিলেন বলে দেবীর নাম হয় ভান্ডানি। অন্য একটা মতে, দশমীতে কৈলাসে ফেরার সময় দুর্গা সপরিবারে আরও কিছুদিন কাটিয়ে যান উত্তরবঙ্গের এই গ্রামগুলিতে। সেখানকার মানুষের অবস্থা দেখে শস্যভাণ্ডার ভরিয়ে দেন তিনি। সেই থেকে ভাণ্ডারী, পরে পরিবর্তিত হয়ে ভান্ডানি নামে পূজিত হন দেবী।
লোককথা যাই হোক, পুজো শেষ হয়েও হয় না এখানে। একাদশী থেকে চারদিন পুজো হয় ভান্ডানি দেবীর। এখানে তাঁর বাহন সিংহ নয়, বাঘ। দশভুজা দেবী এখানে হয়ে যান দ্বিভুজা। মূলত বনদেবী হিসেবেই পূজিত হন তিনি। পুজো উপলক্ষে হয় পাঁঠাবলি, ওড়ানো হয় পায়রা। পুজোর কদিন তাই বাড়তি আনন্দে মেতে ওঠে জলপাইগুড়ির এই গ্রামগুলি।