টোকিও প্যারালিম্পিকে ভবিনার যাত্রা শুরু হয়েছিলে চিনের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় যাউ ইয়ং-এর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। প্রথম ম্যাচে পিছিয়ে পড়লেও নক-আউট পর্বের পরবর্তী ৩টি ম্যাচের প্রতিটিতে জয়ী হয়েছেন তিনি। এরপর কোয়ার্টার ফাইনাল পেরিয়ে সেমিফাইনাল। সেখানেও চিনের আরেক তারকা খেলোয়াড়, এই মুহূর্তে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে থাকা মিয়াও জ্যাংকে ৩-২ স্কোরে পরাজিত করেন ভবিনা। পদকজয় নিশ্চিত হয়ে যায় তখনই। তবে গুজরাটের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে উঠে আসা এবং প্যারালিম্পিকে পদকজয়ের পথটা সহজ ছিল না। কিন্তু একাগ্রতা আর অধ্যবসায়ের কাছে যে কোনোকিছুই অসম্ভব নয়, সেটাই আবারও প্রমাণ করলেন তিনি।
১৯৮৬ সালে গুজরাটের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম ভবিনা প্যাটেলের। জন্মের সময় তাঁর শরীরে কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল না। কিন্তু সমস্যা শুরু হয় ঠিক ১ বছর বয়সে এসে। হঠাৎই জ্বর আসে একদিন। প্রথমেই চিকিৎসকের কাছে যাননি পরিবারের কেউ। যখন চিকিৎসক ডাকা হল, তখন বেশ খানিকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। পোলিও ভাইরাস অনেকটা ছড়িয়ে পড়েছে শিশু শরীরে। চিকিৎসায় সেরে ওঠার সম্ভাবনা খুবই কম। তবুও চেষ্টা করেছিলেন ভবিনার পরিবার। বাবার ছোট্ট মুদি দোকান। উপার্জন সামান্যই। পরিচিত মানুষদের কাছে ধার করেও মেয়ের চিকিৎসার চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাভ হয়নি কিছুই। হুইল চেয়ারকে সঙ্গী করেই বাকি জীবনের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে ভবিনাকে।
তবে নিজের প্রতিবন্ধকতার জন্য কোনোদিন আত্মবিশ্বাসের অভাব বোধ করেননি ভবিনা। সরকারি স্কুল ও কলেজে বাকি ছেলেমেয়েদের সঙ্গেই পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। মেধাবী ছাত্রী হিসাবে সুনামও ছিল তাঁর। ছোটো থেকেই চাইতেন শিক্ষিকা হতে। কিন্তু ব্যর্থ হয় সেই স্বপ্নও। পরপর বেশ কয়েকটি বেসরকারি স্কুলে তাঁর আবেদনপত্র বাতিল হয়। কারণ একটাই, তাঁর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা। এই সময় আমেদাবাদের একটি বিশেষ স্কুলে কম্পিটার শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। আর সেখানেই আলাপ হয় টেবিল টেনিস কোচ লালা দোশির সঙ্গে। তাঁর কাছেই প্রাথমিক শিক্ষার শুরু। ধীরে ধীরে খেলাকেই ভালোবেসে ফেললেন ভবিনা।
সারা জীবনে কম সাফল্য পাননি তিনি। অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক জিতেছেন। ২০১১ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত পিটিটি চ্যাম্পিয়নশিপে রুপোজয়ের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রাখেন ভবিনা। ২০১৩ সালে এশিয়ান পিটিটি চ্যাম্পিয়নশিপে রুপোজয়। প্যারালিম্পিকের আগে তিনি পিটিটি-তে বিশ্বে ১২ নম্বরে ছিলেন।
আরও পড়ুন
পোলিও-র প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে প্যারালিম্পিকে বসিরহাটের সাকিনা
ঠিক যেখানে টোকিও প্যারালিম্পিক শুরু করেছিলেন ভবিনা, শেষটাও হল যেখানেই। এদিন বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়াড় যাউ ইয়ং-এর বিরুদ্ধেই ফাইনালে খেলতে নেমেছিলেন ভবিনা। ফলে নিঃসন্দেহে কঠিনতম ছিল এই চ্যালেঞ্জ। তবুও শেষ পর্যন্ত তাঁর নাছোড় লড়াই-ই মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। ফাইনালে জয়, সোনা না এলেও, ভবিনার এই রৌপ্য-অভিযানই তৈরি করল নতুন ইতিহাস। প্রথম ভারতীয় টেবিল টেনিস খেলোয়াড় হিসাবে প্যারালিম্পকে ভবিনার এই পদকজয় ছাপিয়ে গেল তাঁর সমস্ত ব্যক্তিগত সাফল্যকেও।
আরও পড়ুন
বিশ্বযুদ্ধের সৈনিকদের নিয়েই প্যারালিম্পিকের পরিকল্পনা, আয়োজনে এক চিকিৎসক!
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
নিজেরই বিশ্বরেকর্ড ভেঙে টোকিও প্যারালিম্পিকে দেবেন্দ্র ঝাঝারিয়া